বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো গাজীপুরের শ্রীপুরেও বিজয় মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ের কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে স্বাধীনের গলায়। গুলিটি গলার এক পাশ ভেদ করে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সড়কে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
স্থানীয় লোকজন ভেবেছিলেন মারা গেছেন স্বাধীন। তাই কেউ তাকে হাসপাতালে নেননি। আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকেন ঘণ্টাদুয়েক। তাজা রক্তে ভেসে যায় আশপাশ। এরই মাঝে নড়াচড়া ও গোঙানির শব্দে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন বাবা ও মাসহ স্বজনরা। তারা অটোরিকশায় করে তিন ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে তাকে নিয়ে যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুই দিন সেখানে থাকার পরও মিলেনি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। যন্ত্রণায় কাতর ছেলের চিৎকারে তাকে বাঁচাতে ভর্তি করেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেও টাকার অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এখন প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে যন্ত্রণায় ছটফট করে।
স্বাধীন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার চারখালৌজা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। স্বাধীনের বাবা সবজি বিক্রেতা। ভ্যানে করে শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর বাজারে সবজি বিক্রি করেন। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া তারা। অসহায় পরিবারে বাবাকে ব্যবসায় সহায়তা করতেন স্বাধীন।
স্বাধীনের বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। অভাবের কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরে এসেছেন। অনেক কষ্ট করে সংসার চলতো তাদের। আর ছেলে গুলি খাওয়ার পর থেকে তো অন্ধকারে পড়েছেন। স্বাধীন স্থানীয় মেধাসিড়ি স্কুল থেকে ১০ম শ্রেণিতে পড়ার পর অভাবের কারণে আর পড়তে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে বিজয় মিছিলে গিয়েছিল স্বাধীন। ঘটনার সময় সে মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আটকা পড়েছিল, সে সময় সেখান থেকে ছোড়া হয় গুলি। একটি গুলি গলার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর বেঁচে থাকার প্রত্যাশাও ছিল না, মৃতের ঘোষণাও হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুই দিন রেখে তারা বের করে দেয়। ছেলেকে বাঁচাতে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে ঋণ করে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা আরও কয়েকদিন থাকতে বলেছিল। আর্থিক সংকটের কারণে বাড়িতে নিয়ে যান। এখন ঠিকমতো খাবার-ওষুধ কিনতে পারছেন না।
স্বাধীনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, অর্থের অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলের পেছনে ছুটতে ছুটতে তার বাবার ব্যবসাও বন্ধ। দুরাবস্থায় আমাদের সবার চোখেই অন্ধকার।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24