আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেখতে দেখতে বিএনপির আন্দোলন ১৪ বছর শেষ হয়েছে, ১৫ বছরে পা দিয়েছে। আমেরিকার কাছে, ইউরোপের কাছে রোজ রোজ নালিশ করেও কোন কাজ হয়নি। নালিশ করে তারা পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। আজ রোববার দুপুরে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল জলিল ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘন্টায় তিন ঘন্টা ঘুমান। বাকি ২১ ঘন্টা তিনি ঘুমান না। রাত জেগে কাজ করেন। সারাদিন বসে বসে দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। শেখ হাসিনা বিদেশে যান আনন্দ করার জন্য না, প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যান নাই। অথচ তার সফর নিয়ে ফখরুল মুখে বাধে না, যা ইচ্ছে তাই বলেন। মিথ্যাচার তাদের একমাত্র সম্পদ। মিথ্যাকে পুঁজি করে তারা আজকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তাঁকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসেনা। তাদের সঙ্গে দেশের কোন মানুষ নেই। বিএনপির আন্দোলন ভুয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের আজকে বড় জ্বালা। পদ্মা সেতু হয়ে গেল। মেট্রোরেল চালু হলো। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। কিছু দিন লোডশেডিং হয়তো থাকবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির অন্তরজ্বালা কমবে না। নালিশ করতেই থাকবে। জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিশ্ব পরিস্থিতিকে দায়ী করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে আজকে স্যাংকশন, যুদ্ধ, নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে স্থিতিহীন করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বেরর সমস্যা। বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে। একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাধারণ মানুষকে। এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নয়। এই কষ্টের জন্য দায়ী বিশ্বের সংকটজনক পরিস্থিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে জ্বালানির যে সহযোগিতা পেয়েছেন সেটা আমাদেরকে সংকট থেকে সামনের দিনগুলোতে উদ্ধার করবে। আপনাদের কাছে চামচাগিরি করব না, যা সত্য তাই বলব। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা শান্তিতে নেই। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ নেই। এই বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাঁকে নেতা বানিয়েছি।’
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জানুয়ারিতে নির্বাচন করতে পারেনি। ফেব্রুয়ারিতে পারেনি। মার্চ, এপ্রিল, মে মাসেও পারিনি। জুনেও পারবে না। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, নভেম্বরেও পারবে না। ডিসেম্বরেতো নির্বাচন। তখন হবে ফাইনাল খেলা।’
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনীতিক বয়সে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তাঁর মতো নেতৃত্ব আর কাউকে পাইনি।’
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
স্মরণসভায় যোগদানের আগে বেলা ১২টায় নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ এলাকায় আব্দুল জলিলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এরপরে ওবায়দুল কাদের নবনির্মিত নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন।
এফআর/অননিউজ