কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৩নং মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক ভারতীয় নাগরিককে জন্ম সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভারতীয় ওই নাগরিককে গ্রাম : করিমপুর, ডাকঘর ও উপজেলা মুরাদনগর, জেলা : কুমিল্লা দেখিয়ে মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন থেকে জন্ম, ওয়ারিশ ও নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার করিমপুর গ্রামের মৃত গয়াচরন দাসের ছেলে মাখন চন্দ্র দাস এমন অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহম্মেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন ও অভিযোগকারী মাখন চন্দ্র দাসকে রবিবার সকাল ১০টায় তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কোন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও শুধুমাত্র জন্মসনদ দিয়েই বাংলাদেশে পাসপোর্ট করা যায়। তাই তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা না নিলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে। যারা ভারতীয় নাগরিককে ভুয়া জন্ম, ওয়ারিশ ও নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সক্রিয় হয়ে ওঠবে ওই চক্রটি।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাকরাবন গোমতী থানার রাজধরনগর গ্রামের মৃত মুকুন্দ চন্দ্র দাসের ছেলে হারাধন চন্দ্র দাস যার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর আর-৭৫৮৯৫০৩ ও ভারতের পিন নম্বর ৭৯৯০১৩। তার নামে ২০১৭ সালের ১৯ আগষ্ট বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার করিমপুর গ্রাম দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ডিজিটাল জন্ম সনদ (যার নম্বর ১৯৫৮১৯৩৮১৫৪১০৯১৬৭), চলতি বছরের ২৯ জুন একটি নাগরিকত্ব সনদ (যার নম্বর ২০২২১৯১৮১৫৪০১১৩৮৮) ও একই তারিখে একটি ওয়ারিশ সনদ (যার নং ২০২২১৯১৮১৫৪০০১১১৮) ইস্যু করা হয়। দেখা যায়, হারাধন চন্দ্র দাসের ভারতীয় পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারী ১৯৬১ থাকলেও বাংলাদেশে ইস্যুকৃত জন্ম সনদে তার জন্ম তারিখ ২ মে ১৯৫৮ দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, যাকে জন্ম, ওয়ারিশ ও নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হয়েছে, তাদের পূর্ব পুরুষরা এ দেশেই থাকতো। বর্তমানে তাদের নামে অনেক জায়গা সম্পত্তি রয়েছে। তাই তাকে জন্ম, ওয়ারিশ ও নাগরিকত সনদ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. কবির আহামেদ বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে বিষয়টির অধিকতর তদন্ত চলছে। যেহেতু এটা একটা জটিল বিষয়, সেহেতু তদন্তের গভীরে পৌঁেছ রহস্য উদঘাটন করতে কিছুদিন সময় লাগবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ভূইয়া জনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রমান পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।