জেলা সওজের অর্ধশত কোটি টাকার বেশি মূল্যের শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল আদায়ের ইজারা পেতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাঁয়তারা চলছে পছন্দের ঠিকাদারকে ইজারা দেওয়ার। অভিযোগ, ইজারা কোটেশন জমাদানের শেষ দিন ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গেলেও ঠিকাদারদের কোটেশন জমাদানে বাধা দেওয়া হয়। সেতুর টোল আদায়ে সাতবার কোটেশন আহ্বান করার পর ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনলেও তিন দফায় মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের শিডিউল জমাদান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
চারবার কোনো কোটেশনই জমা দেয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। গুঞ্জন কানাঘুষাতে রয়েছে, সড়ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা করে কোটেশন জমা দিয়ে ইজারা বাগিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করেছে। সিন্ডিকেট প্রধান মেসার্স মোস্তফা কামাল এর আগেও পর পর তিনবার শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নেন একই কায়দায়। যা অন্যদের ঠকিয়ে বার বার ঠকিয়ে দেয় অসাধু কর্মকর্তারা।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, সড়ক বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করে ঘুরেফিরে শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নিজের কব্জায় রেখেছে এই সিন্ডিকেট প্রধান। এ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের দাবি উঠেছে।
সওজের স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর পরবর্তী তিন অর্থবছরের জন্য ময়মনসিংহ শেরপুর সড়কের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর শম্ভুগঞ্জ সেতুর প্রথম ইজারা কোটেশন আহ্বান করা হয়।
সর্বশেষ চলতি ২০২৪ সালের ৯ মে সপ্তমবারের মতো ইজারা কোটেশন আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ১ম, ২য়, ৪র্থ ও সর্বশেষ সপ্তমবারের আহ্বানে কোনো কোটেশনই জমা পড়েনি। ৩য় বারের কোটেশনে হাসান ট্রেডার্স ও মোস্তফা কামাল, ৫ম বার আবু তালেব ও ৬ষ্ঠ বার মেসার্স মোস্তফা কামাল এই চার ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান ইজারা কোটেশন জমা দেয়। এদের মধ্যে মেসার্স মোস্তফা কামাল ৫৬ কোটি টাকার কিছু বেশি ইজারা কোটেশন জমা দেয়।
সওজের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, চারজনের ইজারা কোটেশনের একটি তুলনামূলক বিবরণী-সিএস অনুমোদনের জন্য সড়ক ভবনে পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ কোটেশন দাতাকে ইজারা দেওয়া হবে, নাকি পুনইজারা কোটেশন আহ্বান করা হবে, তা নির্ভর করবে সড়ক কর্তৃপক্ষের ওপর। চলতি বছরের আগামী ৩০ জুন চলতি তিন অর্থবছরের ইজারার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
এই তিন বছরের জন্য এই ইজারা কোটেশন ছিল ৪৭ কোটি টাকা। মেসার্স মোস্তফা কামালের সিন্ডিকেট এই তিন অর্থবছর শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল ইজারা আদায়ের দায়িত্ব পালন করে। এর আগেও তিন বছর মেয়াদি টানা দুই টার্মের ইজারা পায় মেসার্স মোস্তফা কামাল।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, ইজিপির বদলে ম্যানুয়ালি ইজারা কোটেশন আহ্বান ও জমাদান করায় এই ইজারা কোটেশনে কোনো প্রতিযোগিতাই হয়নি। জমাদানের ক্ষেত্রেও বাধা-বিঘনের ঘটনা ঘটেছে। মেসার্স সৌরভ ব্রিকসের মালিক মাহাবুবুল হক অভিযোগ করেন, গত ২৭ মে ইজারা কোটেশন জমাদানের শেষ দিন সওজের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কোটেশন জমা দিতে গেলে বহিরাগত মস্তানদের বাধাদানের কারণে তিনি জমা দিতে পারেননি।
বিষয়টি কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিতভাবে অবহিত করার কথা জানিয়ে এই ঠিকাদার আরোও বলেন, এর আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশন কার্যালয়ে ইজারা কোটেশনের শিডিউল কিনতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল ইজারা কোটেশনের শিডিউল নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকেও বিক্রির কথা ছিল।
ইজারা কোটেশন জমাদানে বাধাদানের অভিযোগ স্বীকার করেননি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি জানান, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। প্রচার রয়েছে, অর্ধশত কোটি টাকার বেশি মূল্যের শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল আদায়ের ইজারা পেতে ‘সমঝোতা’ করে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24