প্রাচীন বাংলার রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ লিচুর জন্য বিখ্যাত। দেশের অন্যসব স্থানের তুলনায় এখানে আবহাওয়া লিচুর জন্য বেশি উপযোগী। তাই সারাদেশে সোনারগাঁয়ের লিচুর কদর বেশি।
এদিকে এবার গরম বেশি পড়ায় অধিকাংশ লিচুই আগেই পেকে গেছে। ফলে এখনই অনেক বাগান মালিকরা লিচু বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবার বৃষ্টি একেবারেই কম হওয়ায় আকৃতিতে লিচু তেমন বড় হয়নি। বাজারে লিচুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
শনিবার (৬ মে) দুপুরে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন লিচু বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কদমী, চায়না-৩, মোজাফফরপুরী, এলাচি, পাতি এসব জাতের লিচু বেশি চাষ হয়েছে। শেষ সময়ে চাষিরা তাদের লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তারা লিচু বাগান পাহারা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার বাজারে লিচু বিক্রির জন্য টুকরি, বাঁশ, রশিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। পাইকাররাও বাগানগুলোতে আসছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি, সাদিপুর ইউনিয়নের খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, পানাম, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দপুর, গাপতলী, হারিয়া, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দিঘীরপাড়সহ প্রায় তিন শতাধিক লিচু বাগান আছে।
জন্মের পর থেকেই সোনারগাঁয়ে লিচু চাষ করে আসছেন রবিউল হুসাইন নামের এক যুবক। তাদের ছয়টি লিচুর বাগান আছে সোনারগাঁয়ে। মন্নারবাগ গাপতলী গ্রামে তার নিজের দুই বিঘা জমিতে একটি লিচু বাগান আছে। যেখানে ৬৫টি লিচু গাছ আছে।
মাহমুদুল হাসান জানান, এবার বেশি গরম পড়ায় লিচু আগে পেকে গেলেও আকারে তেমন বড় হয়নি। যদি আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাত হলে আকারে বড় হবে। তা না হলে লিচু এ আকারেই বাজারে বিক্রি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই আমার বাগানের লিচু সবার আগে বাজারে যায়। এবার লিচু আকারে ছোট হলেও আশা করছি গত দুবছরের তুলনায় লিচুর ভালো দাম পাবো।
লিচু বাগান মালিক বলেন, আশা ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুতে বেশি লাভবান হবো। তবে লিচু আকারে ছোট হওয়ায় দাম নিয়ে শঙ্কা আছে। সার থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেশি। তাই ভালো দাম না পেলে আমাদের বিকল্প কিছু দেখতে হবে।
ঢাকা মিরপুর থেকে সোনারগাঁয়ে লিচু কিনতে আসা এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সবসময় এখান থেকে লিচু কিনতে আসি। এবার এখনো কোনো বাগান থেকে লিচু কেনা হয়নি। বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখছি যে বাগানের লিচু ভালো মনে হবে সেখান থেকেই কিনবো।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ১০৫ হেক্টর। এবার ফলন কিছুটা কম হবে কেননা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনেক লিচু ছোট অবস্থায় থাকতে ঝরে পড়ে গেছে। ফলন হবে ৬.৫ টন/ হেক্টর। মোট উৎপাদন হবে ৬৮২ মে.টন। সোনারগা উপজেলায় আগাম লিচুর বেশ সম্ভাবনা রয়েছে । তবে বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় লিচু আকৃতিতে তেমন বড় হয়নি। আমরা আশাবাদী চাষিরা বাজারে লিচু বিক্রি করে লাভবান হবেন। লিচুর বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও একই আশা করছেন।
শান্ত/অননিউজ