কুমিল্লার মুরাদনগরে বন্ধু সুলভ আচরণ করে পথিমধ্যে চা খায়িয়ে অটোচালককে অজ্ঞান করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত আনুমানিক ৮টায় বোরারচর থেকে জাহাপুর বাজারে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। অটোচালক ইমন (২১) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ¯স্নাতক ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও উপজেলার বোরারচর গ্রামের মান্নান মিয়ার (৬২) ছেলে। পরিবার সুত্রে জানায়, ইমনের বড় ভাই অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারের সব খরচ চালাতো। হঠাৎ বাস দূর্ঘটনায় বড় ভাই মারা যাওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব এসে পরে ইমনের কাঁধে। বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি অটোরিকশাটি ছোট ভাই ইমন চালাতে শুরু করে। কলেজ কামাই করে অটোরিকশা চালিয়ে যা রোজগার হতো তা পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতো ¯স্নাতক শিক্ষার্থী ইমন। যে হাতে থাকার কথা বই খাতা, সংসারের হাল ধরতে সে হাতে তুলে নিতে হলো বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া অটোরিকশা। এতেও পড়া লেখায় দমে যায়নি ইমন। হঠাৎ জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার বাহন অটোরিক্সাটি তাকে অজ্ঞান করে ছিনিয়ে নিলো একদল বিপদগামী যুবক। রোজগারের শেষ সম্ভল হারিয়ে সে এখন অর্ধ অচেতন অবস্থায় উপজেলার হাসপাতালের বিছানায় বসে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
আহত শিক্ষার্থী অটোচালক ইমনের মা নীলুফা বেগম অশ্রুঝরা কণ্ঠে প্রতিবেধককে বলেন, কে বা কাহারা আমার ইমনকে অজ্ঞান করে অটোরিকশা ছিনতাই করেছে আমি জানিনা। আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। অটোচালক ইমন প্রতিবেদককে বলেন, সন্ধ্যায় বাড়ীর গ্যারেজে অটোরিকশা রেখে দিয়েছিলাম। হঠাৎ তিনজন যুবক খুব অনুরোধ করতে লাগলো জাহাপুর নামিয়ে দিতে। তাদের অনুরোধে আমি যেতে রাজি হই। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় খুব বন্ধুসুলভ আচরণ ছিলো সকলের। একপর্যায়ে জাহাপুর বাজারে চা খাওয়ার জন্য নামে সকলে, আমাকে খুব অনুরোধ করে চা খাওয়ায়। আবার অটো চালানো শুরু করলে আমার মাথা ঝিমতে থাকে। তারপর আর কিছুই মনে নেই। আহত ইমনের ছোটভাই ইকবাল বলেন, আনুমানিক রাত ৮টায় আমার ভাই ইমন গাড়ী নিয়ে বের হয়। রাতে বাড়িতে না আসায় আমরা খুব চিন্তায় পড়ে যাই। অপেক্ষা শেষে সেহেরীর সময় ভাইকে খোঁজা শুরু করি। তখন একটা অপরিচিত ব্যক্তির নম্বর থেকে ফোন আসলে জানতে পারি ভাইয়াকে আলীরচর কলেজের সামনে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। সেখানকার এলাকাবাসির সহযোগিতায় ভাইকে দ্রত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে ইমনের বাবা মান্নান মিয়া বলেন, টাকার অভাবে ছেলেকে সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসছি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ করে আর কি হবে!
শান্ত/অননিউজ