অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক।।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অগ্নিসংযোগকারী, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন, তারা কোন বাংলাদেশ চান- ধ্বংস স্তুপের না উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপি’র সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যার প্রসংগ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছেই জানতে চাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায় এই ধ্বংসস্তুপ নাকি উন্নত বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কাই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দিতে পারে, আর বিএনপি পারে কেবল ধ্বংস করতে। এই বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ যেন খেলতে না পারে সেজন্য আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিসা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম ও শেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত দেশে ধারবাহিক গণতন্ত্র ছিল বলেই দেশ এগিয়েছে। সেটাকেই এরা ধ্বংসের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কাজেই আমি দেশবাসীর কাছেই জানতে চাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায় এই ধ্বংস স্তুপ নাকি উন্নত বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জীবন মানের যে উন্নতি হয়েছে সেটা যদি তারা ধরে রাখতে চায় তাহলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই সেটা সম্ভব হবে। তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন, একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। আর এরা ধ্বংসই দিতে পারবে। এরা আসলে দেশের স্বাধীনতাও চায়না মানুষের কল্যাণও চায়না। এটা হলো বাস্তবতা।

এদিন জাতীয় সংসদে ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র সমাবেশ এবং পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি আহুত হরতালের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-সাংবাদিক নির্যাতন আর পিটিয়ে পুলিশ সদস্য হত্যার মর্মস্পর্সী ফুটেজ প্রদর্শন করে তিনি বলেন, এ দৃশ্য আর দেখা যায়না। সাংবাদিকরা কি অপরাধ করেছে। তাদের যেভবে নির্যাতন করেছে, কুপিয়েছে অথচ তারাতো বিএনপি’র সংবাদ সংগ্রহেই গিয়েছিল? যারা ক্ষতিগ্রস্থ আমরা তাদের পাশে আছি। সাধ্যমত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যাদের বাস পুড়িয়েছে, যাদের গাড়ি পুড়িয়েছে, এর আগেও সবাইকে আমি সহযোহিতা দিয়েছি। ইনশাল্লাহ বাকীদেরও আমরা সেই সহযোগিতা দেব।

তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে আমি এই আহবান জানাব, তারা যদি এক হয়ে প্রত্যেকে নামে এবং যারা এই ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করে, দুর্বৃত্তপনা করে সেই দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দেবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ দেশবাসীকে বলবো আপনারাই এদের ধরিয়ে দিন। আপনার গাড়ি পোড়ালে এদের ধরে আগুনে ফেলেন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিন। তাহলেই ওরা থামবে, না হলে থামবে না এবং এটা দেশের মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে করতে হবে। দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে এদের এই দুর্বৃত্তপনা কমানো যাবে, এটা আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই মানুষকে বলবো ভয়ের কিছু নেই। এরা মুষ্টিমেয় অতএব এদের বিরুদ্ধে সকলকে এক হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আামি আহবান জানাচ্ছি। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক সেটাই আমরা চাই, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার বার তাঁর ওপর আঘাত এসেছে কিন্তু তিনি বেঁচে গেছেন এজন্য দেশের কাজ তিনি করতে পেরেছেন, করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এখনও আমার ওপর বার বার হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে নয় বিদেশেও প্রচেষ্টা (হত্যার) চালানো হয়েছে। তাঁর বিদেশ সফরে এ ধরনের হামলা প্রচেষ্টার কথা বললেও তাঁর বিস্তারিত উল্লেখ না করে তিনি লন্ডনে অবস্থানকারি খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান এবং তার দোসরদের এজন্য দায়অ করেন।

তিনি বলেন, এজন্য আমি দুশ্চন্তাগ্রস্থ নই। জন্মালে মরতেই হবে, কিন্তু যতক্ষন প্রাণ আছে এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। ‘জনগণকে তাঁর শক্তির উৎস উল্লেখ করে’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার দেশে ফেরা, কাজ করা, যার পিছনে একটাই শক্তি ছিল সেটা বাংলাদেশের জনগণ। এই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলছি। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার পরিবার বলতে মনেকরি এই বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে। সেই মানসিকতা এবং আন্তরিকতা নিয়েই আমি দেশের কাজ করি।

তিনি বলেন, যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করি তখন কে কোন দল করে সেটা আমি দেখিনা, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছি। তাদের জন্য কাজ করেছি। তাদেরকেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেননা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সেই লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার পরিকল্পনা এবং শতবর্ষের ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ করে দিয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবেনা। ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে।

প্রধানমন্ত্রী পিটিয়ে মানুষ হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগকারিদের ‘জানোয়ার’ আখ্যায়িত করে সংসদে প্রশ্ন রাখেন- দেশবাসীর কাছে আমি জানতে চাই কোন বাংলাদেশ চান আপনারা ? এই সন্ত্রাসি, এই জঙ্গি, এই অমানুষগুলোর সঙ্গে কারা থাকে? আর তাদের সাথে বসার কথা কারা বলে।

‘পশুদের একটা ধর্ম আছে, এদের সেটাও নাই। ওরা চুরি, লুন্ঠন, দুবৃত্তপরায়নতা ছাড়া আর কিছুই জানেনা। বিএনপি’র সৃষ্টিকারি জিয়াউর রহমান তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) বাবা-মা-ভাইদের হত্যাকান্ডে জড়িত বলেও উল্লেখ করেন। আর খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া তাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তারা আবারও কোন অবস্থায় দেশকে নিতে চায়, সে প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন তিনি।

‘বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের জন্য সন্ত্রাস করছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত অগ্রগতির বিশদ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত ছোট একটি পুস্তিকাও সংসদ সদস্যদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

রিজার্ভ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে, কমে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় খুব সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র এক হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি। আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম। জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি। তাহলে এগুলো গেল কোথায়? মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্যগুণ বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা।

তিনি বলেন, আমরা দেশকে ভালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জিডিপির আকারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। আর এইসময়ে নির্বাচনে ব্যাহত করতে বিএনপি ও জামায়াত অগ্নি-সন্ত্রাস ও সহিংসতা করে চলছে।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭টি বিল পাশ হয়েছে। ৯ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে ২৫টি এবং ২৭২ কার্যদিবসের এই একাদশ সংসদে ১৬৫টি বিল পাস হয়। একাদশ সংসদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি বিল পাশের প্রক্রিয়ায় তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদও জানান।

সূত্র: বাসস

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ