অপপ্রচারের প্রতিবাদে নড়াইলে জুলাই শহীদ রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
নড়াইল প্রতিনিধি

জুলাই শহীদ রবিউল ইসলাম লিমনকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নড়াইল প্রেসক্লাব হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের আয়োজনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আহত জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই বিপ্লবী যুব সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ মোস্তাফিজ। বক্তব্য তুলে ধরেন জুলাই শহীদ রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার।
সাবরিনা আক্তার (রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী) বলেন, “আমার স্বামী মিথ্যা অপবাদ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এখন তার মৃত্যুর পরও অপবাদ পরিবারের ওপর মানসিক যন্ত্রণা হয়ে ফিরে আসছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরো বলেন ” ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় (প্রথম আলো) প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে দ্রæত সময়ের মধ্যে পুনরায় সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। ভুল তথ্যের জন্য ভুক্তভোগী পরিবার ও শহীদদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে
লিখিত বক্তব্যে শেখ মোস্তাফিজ বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা,বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনে জুলাই শহীদ মো. রবিউল ইসলামকে ‘ভুয়া জুলাই শহীদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা চরম অপমানজনক ও সত্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের সময় রবিউল ইসলাম এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিলেন এবং এক শিশুকে আহত করেন। পরে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করে এবং তার মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এ ব্যাপারে রবিউলের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি পুরোপুরি মিথ্যা। মো. রবিউল ইসলাম লিমন (ফেসবুক আইডি: যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ংযধৎব/১ঋজর৮গজ২ভঃ/?সরনবীঃরফ=িিঢষভৎ, জধনরঁষ খরসড়হ) পুরো জুলাই আন্দোলনে ছাত্রজনতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর ফেসবুক আইডিতে রয়েছে অসংখ্য পোস্ট ও ভিডিও, যেখানে তিনি আন্দোলনের সমর্থনে সরব ছিলেন। এমনকি শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর, তিনি সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে পোস্ট করেছিলেন।
ঘটনার দিন উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজয় মিছিল চলাকালে হঠাৎ করেই গোলাগুলির পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন উত্তেজিত জনতা রবিউলকে ‘র’ এর এজেন্ট বা ছাত্রলীগ কর্মী বলে ভুল সন্দেহ করে বেধড়ক মারধর করে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনি গুলি চালিয়েছেন। কেউ আর তাঁকে রক্ষা করতে সাহস পায়নি। এই মর্মান্তিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হন রবিউল।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, রবিউল ইসলাম লিমন ছিলেন ‘প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন’-এর একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক। তিনি বিনামূল্যে পথশিশুদের শিক্ষাদান করতেন। তাঁর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সহকর্মীরা এবং শিক্ষার্থীদের পরিবারও তাঁর মানবিক কাজের সাক্ষী। তাঁর মতো একজন সমাজসেবক কীভাবে নিজেরই পক্ষে থাকা জনতার উপর গুলি চালাতে পারেন তা একবার ভেবেই দেখা উচিত।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সাংবাদিকতা হল সমাজের দর্পণ। সত্য উদঘাটন ও নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। একটি ভুল প্রতিবেদন একজন নির্দোষ মানুষকে মৃত্যুর পরও কলঙ্কিত করতে পারে। এমনটি হওয়া উচিত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মাহমুদা সুলতানা রিমি, জুলাই শহীদ রবিউলের চাচা মোল্যা আহমেদ সাঈদ টুলু সহ অনেকে।
রবিউল ইসলাম নড়াইলের নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ৫ই আগস্ট ঢাকার উত্তরা এলাকায় নিহত হন।
jn