কুমিল্লা জেলা লালমাই উপজেলার কলমিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
অফিস কর্তৃক জানা যায় একজন প্রধান শিক্ষক, একজন নৈশপ্রহরী ও একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই সূত্রে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত কথা থাকলেও পরীক্ষা শুরু হয় সাড়ে ১১টায়। পরীক্ষা হওয়া শেষে ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও উন্মুক্ত ফলাফল প্রকাশ না করে কলমিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের গেইট দিয়ে হঠাৎ নিয়োগ কমিটির প্রধান সদর দক্ষিণ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তৈয়ব, ডিজি প্রতিনিধি, ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা মজুমদার সহ অন্যন্যারা চলে যায়।
জানা যায়, কলমিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাকে আগে থেকে নির্বাচিত করে নেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। টাকাপয়সা লেনদেনের মাধ্যমে মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে নিয়োগ দিবে। এই খবর শোনাতে কয়েকজন পরীক্ষা দিতে আসে নাই। এবং কয়েকজন পরীক্ষা দিয়েও স্থানীয় গণমাধ্যম সংবাদকর্মীদের কাছে নিয়োগের অনিয়ম অভিযোগ করেন।
প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিতে আসা খলিলুর রহমান, মোস্তফা কামাল সহ আরও কয়েকজনে অভিযোগ করেন। দরকার কি ছিলো এমন পরীক্ষা নেওয়া, আমাদের ব্যাংক ড্রাফট ২ হাজার টাকা নেওয়া। আসা যাওয়া খরচ ও সময় নষ্ট করা। পরীক্ষা দিলাম, কবে ফলাফল দিবে কিছুই বলে না, ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এখন বলে পরে জানানো হবে।
জানা যায়, যাকে আজ নিয়োগ দেওয়া কথা ছিলো তিনি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৩১শে অক্টোবর ২০২৩ সালে দেশ রূপান্তর পত্রিকায় উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষক করেন দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি! এবং ২রা নভেম্বর ২০২৩ সালে যুগান্তর পত্রিকায় "কুমিল্লায় এক শিক্ষক বেতন নিচ্ছেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে, একই সঙ্গে তিনি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক" শিরোনামে তার বিরুদ্ধে নিউজ হওয়াই নড়েচড়ে বসে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
এই বিষয়ে ডিজি প্রতিনিধি, ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা মজুমদারকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শাহিন মিয়া ও জহিরুল ইসলাম বলেন, আগে প্রধান শিক্ষক বাদ দিয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিবে।কি কারনে বাদ দিবে তা আমরা জানি না। নতুন নিয়োগের বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। আজকে নিয়োগ পরীক্ষা আছে, আসলাম এবং জানলাম। পরীক্ষা হলো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় মেম্বার জলিল হোসেন বলেন, আজকে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ করেনি। শোনেছি ভিতরগতভাবে টাকাপয়সা লেনদেনের মাধ্যমে একজনকে ঠিক করে ফেলেছে।
যাকে নিয়োগ দেওয়ার কথা তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজিবের বাড়ির লোক এবং প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তিনি আমেরিকায় থাকায় তার প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজিবকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হানিফ মজুমদারের প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিকে জানিয়ে তারপর ফল প্রকাশ করা হবে। টাকা বিনিময়ে বেলাল হোসেনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আপনার বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ উঠতে পারে, স্বাভাবিক। কাজ করলে অভিযোগ উঠবে। এই প্রতিষ্ঠানের দুইজন সরকারি বেতন পান। বাকিদের বেতন প্রতিষ্ঠাতা দেন। তাকে না জানিয়ে কিভাবে ফলাফল প্রকাশ করবো? তিনি প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালাবেন?
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তৈয়বের কাছে নিয়োগের অনিয়ম জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারনে আমরা কমিটির কাছে ফলাফল জমা দিয়ে আসি। কমিটি ফলাফল প্রকাশ করবে। পিছনের দরজা দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মাঠে অনেক লোকজন ছিলো। কমিটির সাথে কথা বলে আমরা এসেছি। অনিয়ম থাকলে আপনি রিপোর্ট করেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা হবে, আমি জানি না। ১১ তারিখে নিয়োগের পরিবর্তন বিষয়ে নির্দেশনা জারি হয়েছে। আজকে পরীক্ষা কে নিলো? আমার প্রতিনিধিতো যাওয়ার কথা নয়। তিনি কিভাবে গেলেন? আমি এই বিষয়ে জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।
এফআর/অননিউজ