ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা আর নেই। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আজ (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে মারা যান ঐন্দ্রিলা।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, সকলের প্রার্থনাকে বিফল করে চলে গেলেন 'জিয়ন কাঠি'-খ্যাত নায়িকা ঐন্দ্রিলা শর্মা। ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর। এরপরই তাঁকে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করা হয় অপারেশনও। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মাঝে কদিন সুস্থতার দিকে এগোলেও শেষ পর্যন্ত লড়াইটা হেরেই গেলেন 'ফাইটার' ঐন্দ্রিলা। গত বুধবার তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় পর পর দু'বার। মাঝে খবর ছড়িয়ে যায় যে তিনি আর নেই। তখন তাঁর বন্ধু সব্যসাচী জানান, এই খবর মিথ্যে। শুক্রবার তাঁর অবস্থার খানিক উন্নতি হলেও শনিবার ফের অ্যাটাক। ১০ বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় অভিনেত্রীর। এরপরই আর শেষ রক্ষা করা গেল না। রবিবার ২০ নভেম্বর চলে গেলেন সকলকে কাঁদিয়ে।
কয়েক বছর আগেই বছর কুড়ির গণ্ডি পেরিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা, অথচ এই স্বল্প সময়ে কী ভীষণ লড়াই করে গেলেন। দেখিয়ে গেলেন বেঁচে থাকার লড়াই কাকে বলে। প্রথমে ২০১৫ সালে মারণ রোগ ক্যানসার থাবা বসায় তাঁর শরীরে। তারপর ২০২১ আরও একবার তিনি ক্যানসার আক্রান্ত হন। দুইবার ক্যানসারকে হারিয়ে, কেমোথেরাপি করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কাজে ফেরেন। একাধিক ওয়েব সিরিজ, সিনেমায় অভিনয় করেন। কিন্তু তারপরই আচমকা তাঁর ব্রেন স্ট্রোক। সেখানেও লড়েছিলেন জি জান দিয়ে। তবে লড়াইটা তাঁর আর জেতা হল না।
আশঙ্কা করা গিয়েছিল শনিবার রাতে। হঠাৎই ফেসবুক থেকে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে করা সব পোস্ট মুছে ফেলেন সব্যসাচী। যে ছেলেটা একদিন আগেও আশার আলো দেখিয়েছিল সকলকে তাঁর এহেন আচরণই বুঝিয়েছিল সব ঠিক নেই।
'ঝুমুর' নামক একটি সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা। এই সিরিয়ালেই তাঁর বিপরীতে দেখা গিয়েছিল সব্যসাচী চৌধুরীকে। এই 'বামাখ্যাপা' সব্যসাচী চৌধুরীই শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর পাশে থেকেছেন। ভালোবাসায়, যত্নে ভালো রাখার চেষ্টা করেছেন ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তিনিও লড়াই করছিলেন। কিন্তু নিয়তির বোধহয় অন্য কিছু ইচ্ছে ছিল।
ঝুমুর ছাড়াও ঐন্দ্রিলাকে একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়ালে দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হল জীবন জ্যোতি, জিয়ন কাঠি, ইত্যাদি। এছাড়া তিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও বেশ কিছু কাজ করেছেন, যার মধ্যে আছে ভাগাড়, পাঁচফোড়ন ২, ইত্যাদি। বহরমপুর থেকে কলকাতা এসেছিলেন স্বপ্ন সফল করতে। বরাবর অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। স্বপ্নপূরণের পথে এগোলেও বাঁধ সাধল শরীর।
১ নভেম্বর ঐন্দ্রিলার অসুস্থতার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাঁর এবং সব্যসাচীর ভক্তরা তাঁর আরোগ্য কামনা করতে থাকেন। সকলেই প্রার্থনা করেন প্রতিবারের মতোই এবারেও যেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। শুধু ভক্তরা নয়, সেলিব্রিটি, যেমন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সহ অনেকেই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন। 'ফাইট ঐন্দ্রিলা ফাইট' পোস্টে ভেসে যায় সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু সবটাই বিফল করে অন্য জীবনে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী। সকলের প্রার্থনাকে পিছনে ফেলে চলে গেলেন অমৃতলোকে।