আইএমএফের ঋণে শর্ত নেই: অর্থমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ।।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আইএমএফ যেসব শর্তের কথা বলেছে সেগুলো আমাদেরই শর্ত। বাজেটে এসব সংস্কারের কথা বলা আছে। আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওয়াশিংটনে আইএমএফ প্রধান কার্যালয়ে বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন পাবে। তারপরই অর্থ ছাড় শুরু হবে।’

আইএমএফ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে যে চুক্তি করেছে তাতে কোনো শর্ত নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে মসৃণভাবেই যেতে পারবে বলে আশাবাদী আইএমএফ।

বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছি তারা (আইএমএফ) সেভাবেই দিয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ যেসব শর্তের কথা বলেছে সেগুলো আমাদেরই শর্ত। বাজেটে এসব সংস্কারের কথা বলা আছে। আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তারা (আইএমএফ) আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বলেছে। এটা তো আমরা আগে থেকেই করে আসছি। ভ্যাট আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা বলেছে। এনবিআর তা নিয়ে কাজ করছে।

‘আইএমএফ ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার কথা বলেছে। আমরা বলেছি, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে আশা করছি খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’

তিনি জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে ওয়াশিংটনে আইএমএফ প্রধান কার্যালয়ে বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন পাবে। তারপরই অর্থ ছাড় শুরু হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই আশঙ্কা করেছিল আমরা ঋণ পাব না। কিন্তু সেই আশঙ্কা ভুল প্রমাণ হলো। আমরা ঋণ পেয়েছি এবং যেভাবে চেয়েছি তারা সেভাবেই দিয়েছে। কোনো শর্ত দেয়া হয়নি।’

ঋণ ও আমানতের সুদ হার ৯ এবং ৬ শতাংশ সীমা তুলে দেয়ার বিষয়ে আইএমএফ কিছু বলেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমি মনে করি, ৯/৬ সীমা তুলে দিলে ছোট, মাঝারি ও বড়- সব ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো শিল্প বাঁচবে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, আইএমএফ আগে যেভাবে শর্ত দিয়েছিল এবার সেভাবে দেয়নি। তাদের সংস্কার প্রস্তাব আর আমাদের সংস্কারগুলোর মধ্যে মিল রয়েছ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘সারে ভর্তুকি নিয়ে আইএমএফ কথা বলেছে। আমরা বলেছি, সারের দাম আর বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ এটা করা হলে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আইএমএফ আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম পুনঃনির্ধারণ করতে বলেছে আইএমএফ। আমরা তা গ্রহণ করেছি। তবে এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে না বলে আইএমএফকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

‘খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে কমিয়ে আনতে বলেছে আইএমএফ। আমরা জানিয়েছি এটা এখন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ আছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেছে আইএমএফ।

আমরা গ্রস হিসাব ও নিট হিসাব দেখিয়েছি তাদের। তারা তা গ্রহণ করেছে।

‘গ্রস হিসাবে আমাদের বর্তমান রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। তা থেকে ৮ বিলিয়ন বাদ দিলে যা হবে সেটি নিট রিজার্ভ। তবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে যে কোনো সময়ে রিজার্ভ তুলে নেয়া যাবে।

‘শ্রীলংকা সরকার বলেছে যে তারা খুব শিগগিরই আমাদের ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার ফেরত দেবে।’

আরো দেখুনঃ