আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নাই: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

আনলাইন ডেস্ক।।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন,স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নাই।আইনটা এমনভাবে করা আছে ভোট দলীয় প্রতীকে হতে পারে। নির্দলীয় প্রতীকে হতে পারে। আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।

শনিবার (৮ জুন) ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রিপোর্টাস ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।

প্রতীকবিহীন তো নির্বাচন হয় না জানিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডেমোক্রেসির সুযোগ থাকার কারণে মানুষ এই বিতর্ক করতে পারছে।বিতর্ক থাকবে না এটা ঠিক না। আমি দলীয় প্রতীকের পক্ষে কিংবা দলীয় প্রতীকহীনের পক্ষে আমি দুইটির কোনটার পক্ষে বিপক্ষে নই।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকারের আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। বিএনপিসহ সমমনা দল বর্জন করছে এই ভোট।

দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে সমস্যা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোতে মূল সমস্যা বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে তাই রাজনৈতিক শিষ্টাচারে পরিবর্তন আনার ওপর জোড় দেন তারা।

জেলা উপজেলা ইউনিয়ন একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে এমন কোনো লিগ্যাল ফ্রেম (আইনি কাঠামো) নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, একীভূত আইন মাদার ল (মাতৃ আইন) করে এক আইনের মধ্যে করতে পারি। আমাদের সময় এসেছে ভাবার এগুলো একীভূত করা যায় কি না।

লোকাল গভর্মেন্ট সার্ভিস সিস্টেম (সেবা ব্যবস্থাপনা) অর্থাৎ কর্মচারীদের একসঙ্গে আনার পরামর্শ দিয়ে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, অর্ধেকের বেশি পৌরসভা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। গ্রাম ও শহরের বিভক্তি খুব ক্ষীণ হয়ে গেছে।

দেশের সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যদি আমরা মাদার ল করি। অবশ্যই এখানে মার্কা থাকবে। একক তফসিলে একই দিনে ভোট করা সম্ভব। ইলেকশনের খরচ কমবে।

প্রতীকের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মানুষ জানিয়ে তিনি বলেন,আমি এককভাবে প্রতীকের পক্ষে। যারা ইলেকশন করে তারা নির্দলীয় মানুষ না। দুনিয়ার সব দল লোকাল গভার্নমেন্টের মানুষের পরামর্শ নেয়৷ আমাদের দলগুলো স্থানীয় সরকার উইং নেই।

দেশের রাজনীতি দুর্বৃত্তরা দখল করে নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন,সমস্যা প্রতীকে নয়৷ সমস্যা আসলে পার্টিতে। মার্কা উঠাইয়া দিলে ভালো নির্বাচন হবে তার নিশ্চয়তা নেই। মার্কা থাকলে খারাপ নির্বাচন হবে তাও ঠিক না।

উপজেলা স্বতন্ত্র ইউনিট হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল( অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতীক হওয়ার কথা ছিল না। প্রতীক দেওয়ার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রের হাতে থাকা প্রতীক না দিলে যে সুবিধা হয়। প্রচুর লোক এখানে অংশগ্রহণ করতে পারে।

পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা দলের সুবিধা অসুবিধার জন্য এই প্রতীক আনা হয়েছে। প্রতীকের কোনো প্রয়োজন নাই। আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকুক।

বিশ্বে চার রকমের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আছে জানিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন, কোথাও আছে আদৌ কোনো নির্বাচন হয় না। যে দল আসে তারাই লোক বসিয়ে দেয়৷ যেমন মালয়েশিয়া। এখানে সরাসরি নির্বাচন হয় না। দ্বিতীয় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। তৃতীয় দল প্রতীক দেয় না কিন্তু দল সমর্থন করে। কাজ করে৷ স্থানীয় কিছু পদে নির্বাচন কিছু পদ সংরক্ষিত থাকে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা।জনগণের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

সংসদ সদস্যদের ২৫ কোটি টাকা দেওয়া সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্গন। মন্ত্রী সংসদ সদস্য হুইপ তাদের সবাইকে স্থানীয় উন্নয়নে যুক্ত হওয়া পরিপন্থি। সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে করা। ”

স্থানীয় সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খাতম। তিনি বলেন, উপজেলা স্তরটা শক্তিশালী করা উচিত। পরিচালনার আইন ও বিধি বিধান অস্পষ্ট ও অসংগতি রয়েছে। যার ফলে প্রশাসনকে অকার্যকর করতে এই আইন যথেষ্ট৷

প্রতীক নিয়ে জটিলতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি। প্রতীকবিহীন ভোট এখানে ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী। প্রতীক না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে। প্রতীক কিংবা প্রতীকবিহীন এটা বড় কথা নয়। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বড় কথা।

দলীয় প্রতীক স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না প্রধানমন্ত্রী এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন।

সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ