আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হলে প্রতিটি নেতাকর্মীকে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হবে – সাবেক এমপি হাজী রহিম উল্যাহ
সোনাগাজী, ফেনী প্রতিনিধি।।
ফেনী-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও সৌদি আরব জেদ্দা মহানগর আ.লীগের সাবেক সভাপতি হাজী রহিম উল্যাহ বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি ও ড. ইউনূসের সঙ্গে এক হয়ে আগামী নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মাট বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচন। এ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হলে প্রতিটি নেতাকর্মীকে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হবে। আমার বাবা ছিল ব্রিটিশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। আমিও পাকিস্তানের নাগরিক ছিলাম। মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিযোগে আমার পরিবারের ৯জন সদস্যকে এক রশিতে বেঁধে হত্যা করেছে রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। ব্রিটিশ থেকে আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলি বাংলাদেশের নাগরিক। যার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। তারই সুযোগ্য কন্যার হাতে বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু, মেট্টো রেল, উড়াল সেতু, ঢাকা-কক্সবাজার রেল পথ, ছয়লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রূপপুর-রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ণ সহ অভুতপূর্ব উন্নয়নে দেশবাসী আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই শান্তির বাংলাদেশে দিন যাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে বিদেশীরা আজ বাংলাদেশে ছুটে আসছে।
২০১৪ সালে আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর এমপি থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যে উন্নয়ন আমার নির্বাচনী এলাকা দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে করেছি, সে উন্নয়ন ১৯৭১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আর কোন সরকার করতে পারেনি। আমি গ্রামের নগন্য পরিবার থেকে উঠে এসে দেশে বিদেশে রাজনীতি করেছি। আপনাদের ভোটে এমপি হয়েছি। আমি কি উন্নয়ন করেছি আর বর্তমান সাংসদ কি উন্নয়ন করেছেন, সেটার বিচার জনগণ করবে। বর্তমান সাংসদ একজন মহারথি। তিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি মহাজোটের সমর্থন নিয়ে জাতীয়পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় উন্নয়নের জন্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল নিয়ে যাননি। তিনি যদি যেতেন তাহলে সোনাগাজী ও দাগনভূঞাবাসীর ভাগ্য বদলে যেত। আমি এমপি হয়ে সোনাগাজী দাগনভূঞার ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করেছি। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন নির্মাণ করেছি। দুই উপজেলার প্রতিটি কলেজে নতুন ভবন নির্মাণ করেছি। ১৬টি মাদরাসায় নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি। এছাড়া সওদাগর হাট সাহেবের ঘাট ব্রিজ, মিয়াজী ঘাট, মাওলানা ঘাট, কুঠির হাট, মুহুরী প্রজেক্ট নতুন ব্রিজ সহ রাম্তা ঘাটের অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। আমি এমপি হয়ে পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন করেছি, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ সে উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেননি।
বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পশ্চিমারা আজকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকারের কথা বলছেন, ভাল কথা, কিন্তু বিএনপির শাসনামলে আহসান উল্যাহ মাস্টার, শাহ এসএম কিবরিয়া, নাটোরের সাবেক এমপি মনতাজ উদ্দিন খুন এবং ২১ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার কথা কি আপনারা ভুলে গেছেন? আইভি রহমান সহ ২৪জন নেতাকর্মীকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করা হয়েছে। আজকে তারা আমাদেরকে মানবাধিকারের কথা শেখায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমি আমার বড় ভাইকে হারিয়েছি। ভাতিজাকে হারিয়েছি। নিজেও অসংখ্যবার হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। আমরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সৈনিক। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে আমরা রাজপথে আছি এবং থাকব। আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতিক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই আপনাদের কাছে পাঠান, তাকেই যে কোন মূল্যে এমপি নির্বাচিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন প্রচারের লক্ষ্যে সোনাগাজীতে শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত মতবিনিময় ও কর্মীসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আবুল কালাম বাহারের সভাপতিত্বে ও আ.লীগ নেতা এবিএম তালেব আলীর সঞ্চালনায় সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের মনগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উক্ত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আহম্মদ, উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার নুরুল আমিন, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাস্টার রফিকুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, দেলোয়ার হোসেন মেম্বার, বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী মনির আহম্মদ ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রুহুল আমিন প্রমুখ।
এসময় আ.লীগের নেতাকর্মী সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
এফআর/অননিউজ