বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারের শুরুর দিক থেকেই পীর-ফকির-সুফিসাধকদের মানুষ সম্মানের চোখে দেখেন। করেন যথাসাধ্য ভক্তিও। কুমিল্লার এ অঞ্চলেও অন্যন্য বুজুর্গ সুফি-সাধকদের মতন ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সম্রাট হযরত হাজী আব্দুুল গফুর শাহ্ রহমাতুল্লাহ আলাইহি। এ সাধধক পুরুষ মানুষের ভালোর জন্য কাজ করেছেন ২১ বছর।
জেলার দেবিদ্বার পৌর এলাকার বালিবাড়ি গ্রামে তার মাজার রয়েছে। এ মাজারে সমাহিত আছেন আরও একজন সুফি সাধক 'হযরত হাজী গোলাম আলী শাহ্ রহমাতুল্লাহ আলাইহি। প্রতি বছরের ১৮ই মাঘ আব্দুল গফুর শাহ্'র উফাত দিবস উপলক্ষে ওরশ ও ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হয় মাজার প্রাঙ্গনে। এতে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আধ্যাতিকতা অর্জনের লক্ষ্যে আসেন তার শতশত ভক্ত। ওরশ দেখতে ভীড় জমায় হাজারও দর্শনার্থী।
গোলাম আলী শাহ্ রহমাতুল্লাহ আলাইহির নাতি ছিলেন আব্দুুল গফুর শাহ্ রহমাতুল্লাহ আলাইহি। ১৩১৮ বঙ্গাব্দের প্রথম দিকে গোলাম আলী শাহ্’র বড় ছেলে আলী মোহাম্মদ ফকির দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
শিশুকাল থেকেই দাদা গোলাম আলীর প্রতি আব্দুুল গফুর শাহর ছিলো অগাধ আত্মার টান। নিজ ঘর থেকে এসে বসে থাকতেন গোলাম আলীর সমাধিস্থলে। একা একা সমাধির সামনে করতেন খেলাধুলা। আব্দুুল গফুর শাহ্'র বয়স যখন ১০-১১ ছুইছুই, তখন তিনি কদিন পরপর নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। আবার নিজেই ফিরে আসতেন বাড়িতে। এরই মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে গোলাম আলীর মাজারের পাশেই মক্তব পড়াতেন। তবে তিনি কিভাবে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেছেন কেউ জানতেন না। ২০ বছর বয়সে আব্দুুল গফুর শাহ্ বিবাহ করেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় তিতাসের বন্দারামপুরের হযরত শাহ কামাল রহঃ সাথে। এর কয়েক বছর পর আব্দুুল গফুর শাহ্ হজ্বে যান। হজ্ব শেষ করার পরে বাড়িতে না এসে চলে যান কামাল শাহর রহঃ দরবারে। কামাল শাহর হাত ধরেই তার কাছে বায়াত গ্রহণ করেন। এর পরে ধীরে ধীরে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করেন। হন আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সম্রাট।
হাজী আব্দুল গফুর শাহ্ রহমতুল্লাহ আলাইহি ১৩৬৪ বঙ্গাব্দের ১৮ই মাঘ রবিবার দুপুরে বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে গোমতি নদীতে ভাঙ্গন বন্ধ করতে পানিতে ডুব দিয়ে তিন দিন থাকা। ভিরাল্লা আবুর বাড়ির গাইবি আগুন বন্ধসহ আরও অর্ধশত অলৌকিক ঘটনা রয়েছে তার।
আব্দুল গফুর শাহ্'র ছেলে আব্দুল জলিল ফকির মাজারের সভাপতি দায়িত্বে আছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ থাকায়, তার এই দায়িত্বসহ মাজারের পরিচালনার প্রধান দায়িত পালন করছেন তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর আলম ফকির। তিনি জানায়, শেষবার ২০০৫ সালে আমার শাশুড়ি এই মাজারের সংস্কার করেছে। প্রতিবছরের ১৮ ই মাঘ আব্দুল গফুর শাহ্ স্মরণে ওরশ ও ফাতেহা শরীফ হয়। যথাক্রমে এ বছরও আজ ১৮ ই মাঘ ওরশ ও ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। এতে আসার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ রইল।
এফআর/অননিউজ