মুরাদনগর প্রতিনিধি।।
সাত বছর ৪ মাসেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যু রহস্যের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলেও ফের আলোচনায় এসেছে এ হত্যা মামলাটি। কয়েক দফা মামলার তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। এ মামলার স্বাক্ষী দিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিস তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন মীর্জাপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তনুর পরিবার। তারা বলছেন, ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ বছরে বেশ কয়েকবার লাইজুসহ আমাদের পরিবারের সদস্যরা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে স্বাক্ষী দিয়েছেন। এখন আবারো নতুন করে স্বাক্ষীর জন্য টানা-হেচড়া করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধারের পর আজও এ হত্যা রহস্যের জট খোলেনি। হত্যাকাÐের পরদিন তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই ময়না তদন্তেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুমিল্লা সিআইডি থেকে মামলার ডকেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় হস্তান্তর হয়।
তদন্ত সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ওই নমুনার প্রোফাইলিংয়ের কাজ হয়। মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, হত্যাকাÐের পর দফায় দফায় পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআইয়ের নিকট ক্যান্টনমেন্ট, কুমিল্লা ও ঢাকায় গিয়ে লাইজু ও স্কুলের শিক্ষকসহ পরিবারের সদস্যরা স্বাক্ষী দিয়েছি। এ পর্যন্ত মামলার কোনো অগ্রগতি আমরা জানতে পারিনি। আমাদের সাথে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার কোনো যোগাযোগ নেই। গত সোমবার হঠাৎ করে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ নোটিস নিয়ে লাইজুদের বাড়িতে যায়। সে এখন বিবাহিতা, স্বামীর সংসারে সিলেটে অবস্থান করছে।
তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, স্বাক্ষী আর তদন্তে কেটে গেছে ৭ বছর। দফায় দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। সবাই ন্যায় বিচারের আশ^াস দেয়। জানি না বোনের হত্যাকাÐের বিচার পাবো কিনা?
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান বলেন, মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করছি। ইতিপূর্বে সংগ্রহ করা ডিএনএ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তনুর খালাতো বোন লাইজুর বক্তব্য নেয়া হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে, তবে এখনই তা গণমাধ্যমে বলা ঠিক হবে না। তিনি আরও বলেন, তদন্তভার পিবিআইতে আসার পরই সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তনুর পরিবার ও স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আরো কিছু বক্তব্য নেয়া হতে পারে।
এফআর/অননিউজ