২০৩৫ সালের মধ্যে ইইউ দেশগুলিতে শুধু দূষণহীন গাড়ি অনুমোদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার ক্ষেত্রে জার্মানি আপত্তি জানাচ্ছে। দলীয় রাজনীতির জটিলতার কারণে জার্মানির এমন আচরণ বিরক্তির কারণ হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩৫ সালের পর পেট্রোল ও ডিজেল চালিত নতুন গাড়ির ছাড়পত্র বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে চায়। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইইউ কমিশন ও সদস্য দেশগুলির সরকার গত বছরই নীতিগতভাবে সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু জার্মানির সাম্প্রতিক আপত্তির কারণে সেই উদ্যোগ আপাতত ধামাচাপা দিতে হচ্ছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের অ্যাজেন্ডা থেকেও বিষয়টি বাদ পড়েছে।
জার্মানির তিন দলের জোট সরকারের সবচেয়ে ছোট শরিক উদারপন্থি এফডিপি দল পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় এমন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। পরিবহণ মন্ত্রী ফল্কার ভিসিং ইইউ কমিশনের প্রস্তাব নাকচ করে ২০৩৫ সালের পর তথাকথিত কৃত্রিম ই-ফুয়েল-চালিত গাড়ি অনুমোদনের দাবি করেছিলেন। কমিশন সেই দাবি মেনে প্রস্তাবের নতুন খসড়া প্রস্তুত করা সত্ত্বেও ভিসিং তার আপত্তি তুলে নিচ্ছেন না। তিনি নতুন পালটা প্রস্তাব পেশ করতে চান। ফলে জার্মানি ‘গঠনমূলক’ আলোচনার কথা বললেও ব্রাসেলসে বিরক্তি দেখা দিচ্ছে। তবে শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিষটির নিষ্পত্তি না হলেও অদূর ভবিষ্যতে আপোশ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জার্মানির উৎসাহ সত্ত্বেও কৃত্রিম ই-ফুয়েল নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিশাল গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রচলিত গাড়ির ইঞ্জিন চালাতে পেট্রোল বা ডিজেলের বদলে এমন কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের স্বপ্নের পথে এখনো অনেক বাস্তব বাধা রয়েছে। প্রথমত, এমন জ্বালানি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া ই-ফুয়েল উৎপাদন করতে কত পরিমাণ কার্বন নির্গমন ঘটবে, তাও স্পষ্ট নয়। শুধু এমন সমাধানসূত্রের ভরসায় জার্মান গাড়ি শিল্পক্ষেত্র প্রচলিত গাড়ির কম্বাশচন ইঞ্জিন চালু রাখার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
জার্মানির এমন ‘একলা চলো রে’ নীতির কারণে ফ্রান্সেও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। বহুকাল ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক কালে দুই দেশের মধ্যে ঘনঘন মনোমালিন্য ও সমন্বয়ের অভাব ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ইইউ সম্পূর্ণ নির্গমনহীন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, ২০৩৫ সাল থেকে শুধু দূষণহীন গাড়ি অনুমোদনের প্রস্তাব সেই সংকল্পের চাবিকাঠি। শেষ মুহূর্তে বার্লিনের আপত্তি প্যারিসে আরও ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
অন্যদিকে ইউরোপে জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফ্রান্স পরমাণু শক্তিকে বাড়তি গুরুত্ব দেবার চেষ্টা করায় জার্মানি বিরক্তি প্রকাশ করছে। কাগজেকলমে দূষণহীন হলেও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং পরমাণু বর্জ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে জার্মানি অত্যন্ত সন্দিহান। তাছাড়া ফ্রান্স চতুর্থ প্রজন্মের যে পরমাণু চুল্লির ভরসায় এমন জ্বালানির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, সেই প্রযুক্তি এখনো চালু হয় নি।
ফরহাদ/অননিউজ