ইসরায়েল-হামাসের সংঘাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নজর এখন ইউক্রেন থেকে ইসরায়েলের দিকেই বেশি। এর ফলে সহায়তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইউক্রেন। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সংবাদের শিরোনাম দখল করায় ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে খবর ও আগ্রহে কিছুটা ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে।
অথচ রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামে পশ্চিমা বিশ্বের লাগাতার সাহায্য ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্বলতা অনিবার্য। আর তাই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিছুটা উদ্বিগ্ন।
তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অবশ্য সেই জেলেনস্কির সংশয় দূর করার চেষ্টা করছেন। এক টেলিফোন সংলাপে ফ্রান্সের এই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ফ্রান্স তথা ইউরোপের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের প্রতি অঙ্গীকার খর্ব করা হবে না।
তার মতে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংকট নিয়ে ব্যস্ততা সত্ত্বেও ইউক্রেন থেকে নজর সরে যাবে না।
আসন্ন শীতে রাশিয়া গত বছরের মতো ইউক্রেনের অবকাঠামো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর আকাশপথে হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বণ্টনের অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের ফলে অনেক মানুষকে শীতের মধ্যেও কষ্টে থাকতে হয়েছে। এবারও সেরকম হামলা হলে তার আগে ইউক্রেনের সামরিক ক্ষমতা যতটা সম্ভব বাড়ানো প্রয়োজন বলে জেলেনস্কি ও ম্যাক্রোঁ মনে করেন।
অন্যদিকে ইউক্রেনের সামরিক ক্ষমতা নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মতে, মার্কিন প্রশাসন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার ফলে আখেরে ইউক্রেনের যন্ত্রণা দীর্ঘায়িত হবে।
বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, কিয়েভকে এটিএসিএমএস মিসাইল সরবরাহ করে ওয়াশিংটন ভুল করেছে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে এর ফলে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে তিনি দাবি করেন।
পুতিনের সৌভাগ্য :
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের প্রধান নির্বাহী ব্রনওয়েন ম্যাডক্স ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে যদি ইসরায়েল ও ইউক্রেনের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা ইসরায়েলকেই নেবে। যদিও এই মুহূর্তেই যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে না। তবু বুঝতে পারি, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চিন্তিত হতেই পারেন এবং তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
কিছুদিন আগেই সরকারি শাটডাউন এড়াতে সাময়িকভাবে ইউক্রেনের জন্য নতুন সহায়তা পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। ভবিষ্যতে কিয়েভকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি এখন আরও বেশি নড়বড়ে হতে পারে।
গত ৫ অক্টোবর রাশিয়ার সোচি শহরে এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাহায্যই ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে। যদি অস্ত্র দেওয়া আগামীকাল থেকে বন্ধ হয়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই কিয়েভের সব গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাবে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপের সমর্থনও দিনদিন নড়বড়ে হয়ে উঠছে। সম্প্রতি শস্যচুক্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ইউক্রেনকে নতুন করে আর কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড। আপত্তি ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে স্লোভাকিয়া থেকেও। কারণ, দেশটিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলা নেতা রবার্ট ফিকো বরাবরই রুশপন্থি হিসেবে পরিচিত।
এফআর/অননিউজ