ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে সুবিধাবঞ্চিত বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মুখে হাসি ফোঁটাতে তাদেও পাশে দাঁড়িয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন-‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিতসহ বেদে বহরের শিশুদের মাঝে দেয়া হয়েছে ঈদের নতুন পোশাক। সেই সঙ্গে ইফতারও। ঈদকে সামনে রেখে নতুন পোশাক পেয়ে মহাখুশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
নড়াইল শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দুরে গোবরা এলাকায় চিত্রা নদীর তীরে গেলেই চোখে পড়বে ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস। প্রায় এক মাস ধরে এখানে বসবাস করছেন তারা। ১৫টি পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬০জন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের মনে আনন্দ দিতে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে তাদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। নতুন পোশাক পেয়ে খুশি বিভিন্ন বয়সী শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা। পাশাপাশি বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে ইফতারও বিতরণ করা হয়েছে।
বেদেপল্লীর রাফিউল্লাহ বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমাদের এখানকার সব শিশুকে নতুন পোশাক দিয়েছেন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের ভাইয়েরা। এছাড়া সবাই মিলে ইফতার করেছি। সবুজ সরদার বলেন, স্বপ্নের খোঁজের লোকজন এর আগে শীতকালীন সময়ে আমাদের কম্বল দিয়েছে। তারা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে আমাদের খোঁজখবর নেয়। ফালগুনী বেগম বলেন, এখানকার অনেকেরই সামর্থ্য ছিলো না নতুন পোশাক কেনার। স্বপ্নের খোঁজের ভাইয়েরা আমাদের শিশুদের নতুন পোশাক কেনার স্বপ্ন পূরণ করেছে।
শিশু বাপ্পী নূর, রহমাতুল্লাহ, রিয়ান, সবিনুর, সাজিনুর, ইতিসহ অনেকে জানায়, ঈদের আগে নতুন পোশাক পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এবার ঈদে সবাই মিলে অনেক আনন্দ হবে।
এদিকে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মির্জা গালিব সতেজ জানান, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোঁটাতে প্রতিবছরই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ বিভিন্ন উৎসবে শিশুদের নিয়ে আনন্দ করেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদুল ফিতরেও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক ও ইফতার দিয়ে তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। বেদে পল্লীর ১৫জন শিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত ৬০জন শিশুকে নতুন পোশাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া সবাই মিলে ইফতারি করানো হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সোহেল মোস্তারী বলেন, আমাদের লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো। সমাজের বিত্তবানরাও এভাবে তাদের আশেপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি এগিয়ে আসলে সবার ঈদ হবে আনন্দময়।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়। পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পারিবারিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতা ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ও জীবনযাত্রা মানউন্নয়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ লাভ করে সংগঠনটি। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে ছিলো তারা। সংগঠনটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৪৫জন। এদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।
এফআর/অননিউজ