কর্মই যেন তাঁর একমাত্র সাধনা; ধ্যান ও জ্ঞান। কর্ম পাগল এই মানুষটি সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সমাজের নানা প্রতিকূলতার সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পাশাপাশি তাঁর উপর অর্পিত সকল সরকারি দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলছেন। কোন বিশেষ প্রয়োজনে সে রাত বা দিন যখনই হোক তাঁর সাথে দেখা করতে চেয়ে সুযোগ পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা বিরল। তাৎক্ষণিকভাবে ফোন ধরতে না পারলে পরবর্তীতে ফোন ব্যাক করেন, সাক্ষাৎ প্রত্যাশী মানুষের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তাদের সমস্যা বা দুর্ভোগের কার্যকর সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করা, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা; বিশেষত করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানসহ জেলা প্রশাসনের পুরো টিমকে নিয়ে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করা, মৃত মানুষের সৎকারের ব্যবস্থা করা,বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার সময় যখন সারা দেশে লকডাউন অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় সে সময় দিনরাত পালাক্রমে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে ঘরে ঘরে তিনি ও তার টিম সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।
সর্বশেষ বানভাসি মানুষদের মাঝে রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে শুকনো খাবার, গবাদি পশুর খাবারসহ তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাসহ সরকার প্রদত্ত সকল ধরনের সহযোগিতা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করেছেন। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাইজেশনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ই-নথি ব্যবস্থাপনায় পরপর ০৬ (ছয়) বার সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জনসহ নানা ধরনের উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা যাতে মানুষ বিনা ভোগান্তিতে দ্রুততার সাথে পেতে পারেন সে সেজন্য বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। চান্দিনা ভিটি ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ডিলিং লাইসেন্স নবায়নেও যাতে মানুষের কোনরূপ ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপস তৈরি সহ সার্বিক কর্মকান্ড অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা করেছেন। রেকর্ডররুম থেকে পর্চা সরবরাহ সহ নামজারির সকল কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। বর্তমানে মানুষ ঘরে বসেই তার কাংক্ষিত সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। প্রচন্ড জনবল সংকট থাকা সত্বেও সেবা প্রত্যাশী জনগণ কে সেবা দেওয়ার জন্য ভূমি (রাজস্ব) প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের আপামর মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন এই জেলা প্রশাসক ও তার টিম যা “টিম ফরিদপুর” নামে ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। হ্যাঁ এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হচ্ছেন ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব অতুল সরকার।
তিন বছর কয়েক মাস হয়েছে তিনি এই জেলায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন । তার আগমনের পর পরই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে দেখা গিয়েছে নির্ভীক, নিরহংকার ও সদালাপী এই মানুষটির মনে রয়েছে নানান স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী ভাবনা যা তিনি ফরিদপুরে বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। ছিলেন। শিল্প-সাহিত্য এবং শিক্ষা ও সুকুমারবৃত্তির চর্চায় ফরিদপুরকে দেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জেলায় পরিণত করতে চান তিনি। ২০১৯ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত সভায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ৯০ ডিগ্রি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা রেখার ছেদবিন্দুতে "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক মহাকাশ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার" ও "সাইন্স সিটি" গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে তিনি শুরু করেন তাঁর উন্নয়ন ভাবনা যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। জনপ্রতিনিধি ধর্মীয় নের্তৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, নদী ভাঙ্গন রোধে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সাথে নিয়ে সরকারের কাছে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন যার মধ্যে মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি রক্ষা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার প্রস্তাব অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী প্রবর্তিত ভিশন ২০২১, ভিশন২০৪১,এবং করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা সহ সরকারের সকল নির্দেশনা ও নীতির আলোকে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সমগ্র ফরিদপুর জুড়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এক নতুন উদ্দীপনা। সকলের মনে সঞ্চারিত হয়েছে নতুন দিনের নতুন আলো তথা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের দৃশ্যমান স্বপ্ন। শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি নতুন একটি স্লোগান তৈরি করেছেন আর তা হল হলো "আমার গ্রাম আমার শহর ফরিদপুর হবে শিক্ষানগর।" মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য ভূমি ও গৃহের সংস্থান, প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পাঠাগার গড়ে তোলা, উপজেলা পরিষদে মুজিববর্ষ পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনাসহ মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলার সকল বিভাগের সমন্বয়ে ১০০+ উদ্যোগ ( ১০০+ Initiatives) গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ফরিদপুর জেলায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সমূহকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার বিশেষ উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে যার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী অম্বিকা ময়দানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স অন্যতম। গত এক বছরে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বহুবিধ কাজের মধ্যে নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।
১. জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ :
ফরিদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। শিক্ষার প্রতি ফরিদপুরবাসীর অনুরাগ সুবিদিত। এ জেলাটি সুপ্রাচীন এবং জনবহুল হওয়া সত্তে¡ও জেলা শহরে মাধ্যমিক পর্যায়ে মাত্র দুটি সরকারি স্কুল রয়েছে। এছাড়া ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে কাঙ্ক্ষিতমানের স্কুলের স্বল্পতা থাকায় মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর কর্তৃক ১ জানুয়ারি, ২০২০ শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝিলটুলীতে ০.৬৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় “জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ, ফরিদপুর”। ইংরেজী ভার্সনে পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে প্লে হতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পলিচালিত হচ্ছে।
২. করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন সফটওয়্যার :
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা। এই করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, জনসচেতনতা তৈরি, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সার্বিক কর্মকান্ড সুচারুভাবে সমন্বয় করার উদ্দ্যেশ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ফরিদপুর করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন’ (www.fcmro.com) শীর্ষক একটি ওয়েবসাইট প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে একদিকে যেমন মানবিক সহায়তা প্রাপ্ত এবং প্রাপ্তিযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে অপরদিকে এ জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, তাদের টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য, করোনা থেকে মুক্তি প্রাপ্তদের সংখ্যা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও হোমকোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়মিত আপডেট করে সংরক্ষন করা হচ্ছে।
৩. এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার :
বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে এক সময়ের পিছিয়ে পড়া ফরিদপুরও ক্রমশ একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয়, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডও একই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধিঞ্চু চাপ মোকাবেলায় ফরিদপুরে একটি আধুনিক মানের ‘এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
৪. QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ড :
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিআর, কাবিটা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী রয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সরকার তাৎক্ষণিক মানবিক সহয়তা প্রদান করে থাকেন। জেলা পর্যায়ে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, একই ব্যক্তি যাতে একাধিকবার সুবিধা প্রাপ্ত না হয় এবং উপযুক্ত ব্যক্তি যাতে কোনভাবেই সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর উপকারভোগীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছজ কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
৫. ব্র্যান্ডিং মেলা :
ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। পাট ও পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্যের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করে পাটকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করা, পাটচাষী ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় মাসব্যাপী ‘ব্র্যান্ডিং মেলা’। মেলায় মাসব্যাপী জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উপস্থাপনা এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্ণার এবং রাইডের ব্যবস্থা ছিল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা ফরিদপুরবাসীর প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।
৬. অটোমেটেড কমপেন্সেসন পেমেন্ট সিস্টেম :
জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ করা এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাদের জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ নির্ধারিত অর্থ স্বচ্ছতা ও দ্রæততার সাথে প্রদান করা। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তি হ্রাসে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার ক্ষতিপূরনের চেক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা ঘরে বসেই জানতে পারছেন, কোন অভিযোগ থাকলেও তা সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা সম্ভব হচ্ছে এবং চেক প্রাপ্তির তারিখ ও সময়ও মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
৭. মিট দ্য ডি.সি/ইউএনও :
শিক্ষার আলোকবর্তিকা সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর। এরই ধারাবাহিকতায় “আমার গ্রাম আমার শহর-ফরিদপুর হবে শিক্ষা নগর” স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী ও অনন্য উদ্যোগ “মিট দ্য ডিসি”। এটি মূলত ফরিদপুর জেলা সদরে পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে জেলা প্রশাসকের সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্র।
একই ভাবে উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপভাবে শিক্ষার্থী বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
৮. আট আনায় জীবনের আলো কেনা :
কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলা এবং সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হচ্ছে একটি গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও গ্রন্থের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় বন্ধন যার সফল প্রয়োগ ঘটেছে "আট আনায় জীবনের আলো কেনা" শীর্ষক একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ফরিদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো গ্রন্থ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ফরিদপুরে অধ্যয়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে তাদের সঞ্চিত টিফিনের অর্থ হতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মাসে মাত্র ৫০ পয়সা (আট আনা) নিয়ে এই গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
৯. ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহ প্রদান :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অঙ্গীকার ‘মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর জেলার বিশ শত (২০০০ জন) ভূমিহীনকে ৩২৩ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫৫৫ জন ভূমিহীনকে ৭৮ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১০৭১টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
১০. সেবা প্রদানে ডিজিটালাইজেশন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ‘ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জনসাধারণকে যেসব সেবা প্রদান করা হয়ে থেকে তার মধ্যে বেশ কিছু সেবা যেমন রেকর্ডরুম থেকে পর্চা প্রদান, সকল ধরনের ডিলিং লাইসেন্স নবায়ন, দাপ্তরিক যোগাযোগ, ই-মিউটেশন প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাটবাজার ব্যবস্থাপনার জন্য ‘অনলাইন চান্দিনা ভিটি ও ভিপি সম্পত্তি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’, এবং ‘স্মার্ট আর্মস লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে।
১১. ই-নথিতে সাফল্য :
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ই-নথিতে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের তৎপরতায় জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত টানা ০৬ বার এ ক্যাটাগরির ২৫টি জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়।
১২. ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল :
বাংলাদেশের প্রথম কয়েকটি জেলার মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় ফরিদপুরে তখন জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষকদের সাথে একটি ভার্চুয়াল মিটিং করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের উদ্দীপনার মাধ্যমে ফরিদপুরে একটি অনলাইন ভিত্তিক স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্কুলটির নামকরণ করা হয় “ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল” এবং বাংলায় “আমার ঘরে আমার স্কুল”।
১৩। উদ্যোক্তা মেলা ও কর্মসংস্থান :
বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার প্রভাবে অনেক মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে স্থানীয় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন কর্মে মেতে ওঠে। তারা স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ ঘরে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে এবং তা অনলাইনের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসার সাথে সাথে তিনি দুই গ্রুপে প্রায় চার শতাধিক উদ্যোক্তার সাথে মিলিত হন এবং তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা করেন।
১৪। উন্মুক্ত গণশুনানি :
প্রায় প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কখনো জেলা প্রশাসকের কক্ষে অথবা সম্মেলন কক্ষে সপ্তাহের প্রতি বুধবার গণশুনানি হয়ে থাকে। ফরিদপুরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। জেলা প্রশাসক অনেকটা নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগত জনগণ যাতে কোনোরূপ বাঁধাবিঘ্ন ছাড়াই জেলা প্রশাসকের সাথে মন খুলে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা বলতে পারেন সেজন্য সপ্তাহের প্রতি বুধবার নিয়মিত গণশুনানির বাইরেও উন্মুক্ত গণশুনানির আয়োজন করছে এবং সাথে সাথেই সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভাব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
১৫। জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি :
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী, উপসহকারী, সার্ভেয়ার, কানুনগো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্য দেশের কোথাও সমন্বিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত একাডেমিক ও প্রায়োগিক তথা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় জেলা পর্যায়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা ভর করে। এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য জেলার সদরপুর উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য পাচঁ একর জায়গা নিয়ে “জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি” নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
১৬। মুজিববর্ষ পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থগার নির্মাণ :
মুজিববর্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় অথবা উপজেলা পরিষদকে ঘিরে মুজিববর্ষ পার্ক নামে দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে এ জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় সমাপ্তির পথে। এর ফলে উপজেলা পরিষদে আগত সেবাপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে সেবা গ্রহণের পাশাপাশি একটি সুন্দর পরিবেশ উপভোগেরও সুযোগ পাবেন।
১৭। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্যালারী :
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এবছর মুজিববর্ষে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে মেমোরিয়াল, স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী’র সকল প্রচেষ্টা শতভাগ সফল করার লক্ষ্য নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বাধীন টিম ফরিদপুর। সম্ভবত বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাতেও একই ধরনের উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয়েছে। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার কর্তৃক যে সকল ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা যে কোন বিচারে অনন্য প্রশংসার দাবিদার। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের সততা, সাহসিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে নির্মোহভাবে জনগণ তথা রাষ্ট্রের সেবা করবেন এমনটিই সকলের প্রত্যাশা। শুভকামনা জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।