ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই অভিনেত্রী। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুটিং সেটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে দগ্ধ হয়ে পুড়ে যায় অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে তার।
তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। তার এমন বিপদের দিনে যারা পাশে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আঁখি।
বুধবার (২২ মার্চ) সেই কষ্টের দিন গুলো স্মরণ করে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
এখন আমি অল্প অল্প হাঁটতে পারি, একটু একটু করে হাত মুঠ করতে পারি, আগের মত কথা বলতে পারি, কষ্ট করে নিজের হাতে খেতেও পারি, সব কিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয়, আমি একটা নিউ বর্ন বেবি। এটা আমার জন্য সেকেন্ড লাইফ। আমার বাম হাতের এখনও শক্তি ফিরে পাইনি। হাতটা অনড় করে রাখতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। তারপর ধীরে ধীরে এই হাতেরও শক্তি ফিরিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ।
যেদিন এডমিট হয়েছিলাম আমার দুই হাত-পা ডিপ বার্ন আর আমার মুখ সুপার ফেসিয়াল বার্ন, সাথে শ্বাসনালীও এফেক্টেড। এতটাই ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে ছিলাম, ডক্টর নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না আমি ফিরে আসতে পারব কিনা। যখন ICU তে ছিলাম তখন বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৩০%।
প্রতি রাতে ১০৪-১০৫ ডিগ্রী জ্বরের ঘোরে শুধু ফ্লাশব্যাক এর মত ফেলে আসা সৃতি গুলো চোখের সামনে আসত। মনে হত মানুষ তার অন্তিম মুহুর্তে এভাবেই বুঝি ভালো সৃতিগুলো দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু এই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাকে ফিরে আসতে শক্তি জুগিয়েছে। আমি বোঝাতে পারবনা গত দু মাস ধরে কী কঠিন যুদ্ধ আমাকে করতে হচ্ছে। আমার এক একটা রাতের অসহ্য যন্ত্রনা শুধু আমি জানি।
ICU তে সারারাত আশপাশের রোগীদের আর্তচিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠত শরীর আর মন। ভারী হয়ে উঠত বাতাস। প্রতিরাতেই কেউ না কেউ এই যন্ত্রনার কাছে হার মেনে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। প্রতিদিন সকালে কোনো না কোনো বেড খালি দেখে বুঝে নিতাম আরেকজন পরাজিত হলো।
অসহ্য যন্ত্রনায় দিন রাত কাতরেছি, ধৈর্যশক্তির অধিক ধৈর্য ধারণ করে সব যন্ত্রনা গিলেছি, আর একটা কথাই বলেছি বার বার, মনোবল ভাঙা যাবেনা, শেষবিন্দু পর্যন্ত চেস্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ সত্যি মহান। আল্লাহ সয়ং স্বয়ং তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি।
বিশেষ কিছু মানুষের দোয়া, ভালোবাসার কথা আমি কখনই ভুলবনা। বার্ন ইন্সটিটিউট এর সকল ডক্টর, বিশেষ করে ডক্টর Shohana Arju এই মানুষটা যেভাবে যত্ন নিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট করেছেন, এক পোস্টে আপনার গল্প বলে শেষ করা যাবেনা আপু। ইবনে হাসান ভাই, আপনি প্রতিদিন যেভাবে খোঁজ নিয়েছেন, প্রতি মুহুর্তে যেভাবে সাহস জুগিয়েছেন, চরম বিপদে যেভাবে পাশে থেকেছেন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি আমার এই নতুন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন সবসময়।
Urmila আমার মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার এত কুইক রেসপন্স, যেভাবে প্রতি মুহুর্তে পাশে ছিলে, তুমি না থাকলে সব কিছু এত সহজ আর দ্রুত হত না। আল্লাহ তোমাকে আরও বড় করুক। কৃতজ্ঞ আমি আমার সংঠন এক্টরস ইকুইটির কাছে প্রথম দিন থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন্য। Fahad ভাই ,আমি হসপিটালে পৌছানোর আগেই আপনি ইমার্জেন্সিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
রুপেল ভাই (Md Faridul Islam) আপনিই প্রথম আমাকে সাহস দিয়ে বলেছেন আপনারা সবাই আমার পাশে আছেন। Mousumi তোমার সেই জ্বালাময় বক্তব্য ICU তে আমাকে যে কি বুস্ট আপ করেছে, ওই মুহুর্তে আমার এমন কিছুরই দরকার ছিল। Rony তুমিও আমার মত একটা টাফ টাইম পার করেছ এই বার্ন ইন্সটিটিউট এ। আমার যন্ত্রনা একমাত্র তুমি বুঝবে কী গেছে আমার উপর দিয়ে। থ্যাংকস আমাকে সাহস দিয়ে যাওয়ার জন্য।
Picklu ভাই তুমি এভাবেই চুপচাপ ভালোবাসা আর দোয়া করে যেও। Mithu আপা তুমি পুরাই একটা ভালোবাসার ডিব্বা, তোমার বানানো জাউ ভাত আমি আবার খেতে চাই। Munna ভাই আমি শুয়ো পোকার খোলস থেকে প্রজাপতি হয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি। Hasib দোস্ত বুস্ট ইজ দা সিক্রেট অফ আওয়ার এনার্জি। Atik, Joyee, Lara, Irin, Imtu, Sifat , Tonni তোদের নিয়ে কিচ্ছু বলব না। আমাকে জলদি বাসায় নিয়ে চল।
আগামী ৬ মাসের যুদ্ধটাও অনেক কঠিন। মন শক্ত করে যেন এই যুদ্ধটাও জিতে ফিরতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে। আমার পরিবার এর প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, যেভাবে আমাকে সাহস দিয়ে গেছেন, বার্ন ইন্সটিটিউটের ডক্টর, নার্স, ফিজিও সকলের যে সেবা আর ভালোবাসা আমি পেয়েছি, আমার সকল সহকর্মী, কলিগ যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।
ফরহাদ/অননিউজ
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com