ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ নবম দিনে গড়িয়েছে। আজও উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির হামাস সেনাদের নিধনের নামে নিরীহ-নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছে না গাজার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই নতুন করে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ ধরনের অভিযান বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান, সৌদি আরব এবং জাতিসংঘ।
রোববার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বিবৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রস্তুতির মাত্রা বাড়াতে এবং বড় ধরনের স্থল অভিযানের প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তারা স্থলপথে হামলার ওপর ব্যাপক জোর দিচ্ছে।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, চার শতাধিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১৫০০’র বেশি লোক আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় অন্তত দুই হাজার ২১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আট হাজার ৭১৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৭০০ শিশু রয়েছে। পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন হাজার ৪০০ জন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অভিযানে ১৩০০-র বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বোমাবর্ষণের পর জাতিসংঘ শনিবার এ কথা বলেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ বলেছে, ওই ভবনগুলোর পাঁচ হাজার ৫৪০ আবাসন ইউনিট ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও প্রায় তিন হাজার ৭৫০টি বাড়ি এত খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, এগুলো বসবাসের অযোগ্য।
চলমান সংঘাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করার সময় শুক্রবার গাজা উপত্যকা এবং ইসরায়েলে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্তি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
এদিকে, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে গাজায় জেনেভা কনভেনশনও মানছে না ইসরায়েল। জেনেভা কনভেনশন ধারা-৪ এর ৩৩নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো সুরক্ষিত ব্যক্তিকে এমন অপরাধের শাস্তি দেওয়া যাবে না যা সে ব্যক্তিগতভাবে করেনি। সমষ্টিগত জরিমানা ও একইভাবে ভয় দেখানো অথবা সন্ত্রাসবাদের সব ব্যবস্থা নিষিদ্ধ। লুট করা নিষিদ্ধ। সুরক্ষিত ব্যক্তি ও তাদের সম্পত্তির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া নিষিদ্ধ।’
কোনো সশস্ত্র সংঘাতে এর বিভিন্ন পক্ষ একটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এর মূল উদ্দেশ্য বেসামরিক নাগরিক অথবা যারা যুদ্ধ করতে পারে না তাদের ওপর প্রভাব সীমিত করা। আর এ উদ্দেশ্যে যেসব নিয়ম তৈরি করা হয়েছে সেগুলোকে যুদ্ধের আইন ও সশস্ত্র সংঘাতের আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের একটি প্রধান অংশ হলো জেনেভা কনভেনশন। কনভেশনের নিয়মগুলোতে মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষার্থে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যুদ্ধ করার কিছু নীতি অন্তর্ভুক্ত আছে।
১৯৪৯ সালে বিশ্বের সব দেশে চারটি কনভেনশন গৃহীত হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে আরও দুটি ও ২০০৫ সালে আরেকটি প্রটোকল এর সঙ্গে যুক্ত হয়। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশই জেনেভা কনভেনশনের নিয়ম মেনে চলে না। যার কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটে।
এফআর/অননিউজ