আগামী বুধবার (৩০ আগস্ট) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ছয় জাতির টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার রাজনৈতিক বৈরী সম্পর্কের কারণে প্রথমবারের মতো হাইব্রিড মডেলে হতে যাচ্ছে এই টুর্নামেন্টের ১৬তম আসর। পাকিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাতেও হবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈশ্বিক এই আসর। নানান টানাপোড়নের পর এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ভারতও।
ওয়ানডে ফরম্যাটে ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ১৭ সেপ্টেম্বর। দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে দলগুলো খেলবে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান নিয়ে গ্রুপ ‘বি’ আর ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কোয়ালিফায়ার খেলে আসা নেপাল গ্রুপ ‘এ’ তে খেলবে।
পাকিস্তান এবং নেপালের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় দিনে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ৩১ আগস্ট ‘বি’ গ্রুপের এই ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সেখানে প্রথম ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে উড়াল দিতে হবে লাল-সবুজদের। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে আফগানিস্তানকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ। তবে এশিয়া কাপে খেলতে ২৭ আগস্ট দেশ ছেড়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কেমন হলো ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে বিবেচিত এশিয়া কাপের ছয় দলের স্কোয়াড
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের স্কোয়াড :
বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, আবদুল্লাহ শফিক, ফাখার জামান, ইমাম-উল-হক, সালমান আলী আগা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মীর, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, নাসিম শাহ, শাহীন শাহ আফ্রিদি, সৌদ শাকিল।
রিজার্ভ : তাইয়াব তাহির
শ্রীলঙ্কার মাটিতে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের রাজমুকুট এখন বাবর আজমদের। তাই নিশ্চিতভাবেই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে তারা। পাকিস্তানের অন্যতম আস্থার নাম হতে পারে দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ স্পিন বিভাগ। এর সঙ্গে দ্য গ্রিন ম্যানদের রয়েছে বিশ্বমানের টপ-অর্ডার। তাই এবারের এশিয়া কাপে আলাদা চমকের নাম হতে পারে পাকিস্তান।
তবে তাদের ভয়ের কারণ হতে পারে অপরীক্ষিত মিডল-অর্ডার। তাই বাড়তি চাপেই থাকবেন ফাখার জামান, বাবর আজম ও রিজওয়ানরা। যদিও রোববার হঠাৎ করেই মিডল-অর্ডারে পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সেখানে তাহিরকে বাদ দিয়ে শাকিলকে দলে ভেড়ানো হয়েছে। তবে বাদ পড়েননি তাহিরও। দলের সঙ্গে রিজার্ভ হিসেবে যাচ্ছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপের ফাইনালের এই সেঞ্চুরিয়ান।
শক্তিশালী পেস ইউনিটে শাহীন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে আছেন আফগান সিরিজে চমক দেখানো হারিস রউফ। এ ছাড়াও আছেন নাসিম শাহ ও তরুণ ওয়াসিম জুনিয়র। স্পিন বিভাগে ভারসাম্যের নাম হতে পারেন উসামা মীর। তাকে সঙ্গ দেবেন সহ-অধিনায়ক শাদাব কিংবা আগা সালমান-হারিসরা।
ভারতের স্কোয়াড :
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, সূর্যকুমার ইয়াদব, তিলক ভার্মা, ঈশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর পাটেল, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামি, কুলদ্বীপ ইয়াদব, প্রসিধ কৃষ্ণা
রিজার্ভ : সাঞ্জু স্যামসন
এশিয়া কাপের গত আসরগুলো বেশ চমক দেখালেও এবার ভারতকে অনেক প্রশ্নের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কেননা, দীর্ঘ ইনজুরি থেকে দলে ফিরেছেন বুমরাহ, রাহুল ও শ্রেয়াস। তবে এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি দিয়ে মাঠে ফিরে সিরিজসেরার খেতাব নিজের ঝুলিতে পুরেছেন বুমরাহ। এবার ওয়ানডেতে কেমন কাম-ব্যাক করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
একাদশে জায়গা পেলে শ্রেয়াস আইয়ারকেও নানান প্রশ্নোত্তর ঘুচাতে হবে। যদিও ইনজুরিতে পড়ার আগে ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় ছিল তারই। প্রশ্ন থাকবে পাঁচে বিবেচনায় থাকা রাহুলকে নিয়েও। তবে এরই মধ্যে দলীয় অনুশীলনে চোট পেয়েছেন তিনি। তাই তাকে (রাহুল) পুরোপুরি ফিট পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
তবে সব ছাড়িয়ে মূল প্রশ্ন, অধিনায়ক রোহিত শর্মার সাম্প্রতিক ফর্ম। ফর্ম বিবেচনায় ঈশান কিষাণের কাছে জায়গা হারাতে পারেন তিনি। আর ভারতের হয়ে চারে কে খেলবেন, তা নিয়েও নানান প্রশ্ন। রাহুলের জায়গায় কিষাণ খেললে চারে খেলতে হতে পারে বিরাট কোহলিকে। তাই সব মিলিয়ে অগোছালো এক পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে ভারতীয় শিবিরকে। তবে নানান জল্পনা-কল্পনা শেষে ভারতের তুরুপের তাস হতে পারেন শেষ সময়ে স্কোয়াডে ডাক পাওয়া তিলক ভার্মা।
এশিয়া কাপে নেপালের স্কোয়াড :
রোহিত কুমার পাওডেল (অধিনায়ক), মোহাম্মদ আসিফ শেখ, কুশাল ভুরটেল, ললিত নারায়ণ রাজবানশি, ভিম শারকি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্রা সিং আইরে, সন্দ্বীপ লামিচানে, কারান এলসি, গুলশান কুমার ঝা, আরিফ শেখ, সোমপাল কামি, প্রাতিশ জিসি, কিশোর মাহাতো, সুন্দিপ জোরা, অর্জুন সাউদ ও শায়াম ধাকাল।
রোহিত কুমার পাওডেলকে অধিনায়ক করে নেপালের ঘোষিত স্কোয়াডে লেগস্পিনার সন্দ্বীপ লামিচানের সঙ্গে স্পিন আক্রমণে আছেন অভিজ্ঞ স্পিনার ললিত নারায়ণ রাজবানশি। আর পেস আক্রমণের দায়িত্বে রয়েছেন সোমপাল কামি ও কারান কেসি। চমক হিসেবে স্কোয়াডে আছেন অভিষেক না হওয়া অফস্পিনার মৌসুম ধকল। এ ছাড়া স্কোয়াডে ফিরেছেন বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে না খেলা সুন্দিপ জোরা। তাই নতুন কিছুর প্রত্যাশা নিয়েই এশিয়ার মিশনে নামবে নেপাল।
বাংলাদেশের স্কোয়াড :
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহাদি হাসান, নাইম শেখ, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব।
এশিয়া কাপ শুরুর আগেই নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাড়া। নানান লঙ্কাকাণ্ড শেষে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব জুটেছে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাঁধে। তবে ইনজুরির থাবায় ছিটকে গেছেন পেসার এবাদত হোসেন, তার পরিবর্তে প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী তানজিম হাসান সাকিব।
লাল-সবুজের মূল ভয়ের কারণ ওপেনিং জুটি। কারণ, ইনজুরির কারণে আগেই স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তার পরিবর্তে দলে টানা হয়েছে তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিম। সবশেষ ইমার্জিং এশিয়া কাপে বেশ চমক দেখিয়েছেন এই ওপেনার।
এদিকে এরই মধ্যে দুঃসংবাদ টাইগার শিবিরে। জ্বরে কাবু হয়ে লঙ্কায় পাড়ি দেওয়া হয়নি আরেক ওপেনার লিটন দাসের। এশিয়ার এই লড়াই শুরুর দুদিন আগে গ্রুপপর্বে লিটনের খেলা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। তাই লিটনের পরিবর্তে কে স্কোয়াডে সুযোগ পাবেন, তা-ও এখন প্রশ্নবোধক। এ ছাড়া ব্যাক-আপ ওপেনার হিসেবে আছেন তিন বছরে মাত্র চার ওয়ানডে খেলা নাঈম শেখ।
লাল-সবুজের শিরোপা প্রত্যাশার অন্যতম কারণ হতে পারে টপ-অর্ডার ও মিডল-অর্ডার। টপ-অর্ডারে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব। এ ছাড়া মিডল-অর্ডারে আস্থার নাম তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম কিংবা আফিফ হোসেন ধ্রুব। ভারসাম্যপূর্ণ স্পিন বিভাগের সঙ্গে টাইগারদের অন্যতম সংযোজন হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে সাড়া জাগানো পেস ইউনিট।
আফগানিস্তান স্কোয়াড
হাশমতউল্লাহ শাহিদ (অধিনায়ক), রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নয়লী জাদরান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলিখিল, করিম জানাত, গুলবাদিন নায়েব, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, নূর আহমদ, শরিফউদ্দিন আশরাফ, ফজল হক ফারুকি, আবদুর রহমান, এস সাফি।
রশিদ-মুজিব-নবি; আফগানিস্তানের শক্তিশালী এই স্পিন ত্রয়ী যেকোনো দলের ভয়ের অন্যতম কারণ। বরাবরের মতোই শক্তিশালী বোলিং বিভাগে আফগানদের নতুন সংযোজন নূর আহমেদ।
দুদিন আগেই পাকিস্তানের সঙ্গে ধবল-ধোলাই হয়েছে আফগানরা। তাই কিছুটা চাপেই থাকবে দলটি। তবে আফগানদের নতুন চমক সাফি, আলিখিলদের মত নবাগতরা। এ ছাড়া ছয় বছর পর দলে ফিরেছেন করিম জানাত। যদিও বিস্ময়কর এক ঘোষণায় দলে নেই পেসার নাভিন-উল-হক।
আফগানদের দুই ওপেনার গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ফর্মে থাকলেও তাদের চিন্তার কারণ হতে পারে মিডল-অর্ডার। দুর্বল মিডল-অর্ডারের কারণেই মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে তারা। তাই এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে না পেলে এশিয়া কাপেও ভুগতে হবে আফগানদের।
শ্রীলঙ্কার স্কোয়াড : এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এশিয়া কাপের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেনি লঙ্কানরা। কবে স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে, তা-ও এখনও নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।
তবে এশিয়া কাপের দিন পাঁচেক আগ থেকেই শনিরদশা শ্রীলঙ্কার। যদিও আগেই দুজনের ইনজুরি মাথা চড়া দিয়েছিল। এরপর জানা যায়, মাঠে নামার জন্য শতভাগ ফিট না দলের অন্যতম বড় ভরসা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও। এ ছাড়া ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপে খেলা হচ্ছে না শ্রীলঙ্কার পেস আক্রমণের নিয়মিত সদস্য দুশমন্থা চামিরার।
সবার আগে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন কুশাল পেরেরা ও আভিষ্কা ফার্নান্দো। করোনার কারণে তাদের খেলা অনিশ্চিত। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে দলে ডাক পেতে পারেন কাসুন রাজিথা, দিনশান মাদুশঙ্কা ও আসিথা ফার্নান্দো। সবশেষ এলপিএলে নজর কেড়েছেন তারা।
এফআর/অননিউজ