কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা এলাকায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৯ বীরযোদ্ধা পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাসকে সমুজ্জল করে রাখতে প্রতি বছর ১১ নভেম্বর পালিত হয় বেতিয়ারা শহীদ দিবস।
বেতিয়ারায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নিহতরা হলেন নিজাম উদ্দিন আজাদ (ছাত্র নেতা), সিরাজুম মনির জাহাঙ্গীর, জহিরুল হক ভ‚ঁইয়া (দুদু মিয়া), মোহাম্মদ সফি উল্যাহ, আওলাদ হেসেন, আবদুল কাইউম, বশিরুল ইসলাম (বশির মাস্টার), শহীদ উল্যাহ সাউদ ও কাদের মিয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাসকে সমুজ্জল করে রাখতে প্রতি বছর এ দিনটিকে বেতিয়ারা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আজ (শনিবার) পতাকা উত্তোলন, শহীদবেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ইত্যাদি নানা কর্মসূচী পালন করা হবে।
জানাযায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাতৃভ‚মিকে শত্রæমুক্ত করার লক্ষ্যে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ নভেম্বর রাতে চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব ক্যাম্পে পৌঁছান।
ভৈরবনগর সাব ক্যাম্পের দুই মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বিএসসি ও সামসুল আলম ১১ নভেম্বর রাতেই গেরিলা বাহিনীর ওই দলটির বাংলাদেশে প্রবেশের পরিকল্পনা তৈরি করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শত্রæমুক্ত কিনা পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও আবদুল মন্নানকে ওই সড়কে পাঠানো হয়।
সিগনালের দায়িত্বে থাকা কাদের ও মন্নান মহাসড়ক শত্রæমুক্ত বলে রাত ১২টায় মূল বাহিনীকে জানান। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৩৮ জনের এ দলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসে। এসময় সড়কের পশ্চিম পাশে গাছের আড়ালে আগে থেকে ওৎ পেঁতে থাকা হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এতে ৯ গেরিলাযোদ্ধা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর স্থানীয় জনগণ শহীদদের গলিত লাশগুলো উদ্ধার করে তৎকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেন। পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দীঘি নামের ওই অঞ্চল শত্রæমুক্ত হয়। পরদিন ২৯ নভেম্বর স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে গর্ত থেকে লাশগুলো উঠিয়ে জানাজা দিয়ে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দ্বিতীয়বার দাফন করেন এবং একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে ৯ শহীদের গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ মহাসড়কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদার ২০১৫ সনের জুনে গণকবরটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের ৪০ শতক জায়গায় স্থানান্তর করে।
এফআর/অননিউজ