গৃহবধু শিখা খাতুন (২৮) কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে শশুর আব্দুল মালেক,শাশুড়ি ফরিদা বেগম সহ অপর ১০ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৭ মে রাত ২ টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে। শিখার স্বামী ওমান প্রবাসী সাইফুল (৩৫) স্ত্রীকে নিজের কাছে নেয়ার জন্য এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। গত ৩ জুন ছিল ফ্লাইট কিন্তু তার আগেই হত্যাকান্ডের শিকার হয় শিখা। নিহতের একমাত্র পুত্র সিয়াম (১১) একটি আবাসিক মাদ্রাসায় লেখা পড়া করে। মায়ের হত্যাকন্ডের পর সে বর্তমানে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নানা বাড়িতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নিহতের পিতা চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার মর্তুজাপুর গ্রামের মহর আলী (৫০) ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং -১১ তারিখ ৪/০৬/২০২২ইং এবং জে-২৩৩/২২। মামলাটির আইও হাটগোপালপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আহছানুর রহমান।
লিখিত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৭ সালে সাইফুল ইসলামের সাথে শিখার বিয়ে হয়। তিন বছর পরে তাদের ঘরে সিয়াম নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সুখেই দিন কাটছিল তাদের। আরো স্বচ্ছলতার আশায় সাইফুল স্ত্রী-পুত্র রেখে ওমানে যায়। সেখানে গত ১০ বছর অবস্থানের পর স্ত্রীকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। কিন্তু শশুর-শাশুড়ি সহ অন্যান্যরা বাধা হয়ে দাড়ায় এবং পরিকল্পনা আটতে থাকে কিভাবে বিদেশ যাওয়া আটকানো যায়।
এরই অংশ হিসেবে গত ২৭ মে রাত আনুমানিক ২ টার দিকে একদল সন্ত্রাসী সহ শিখার বসত ঘরে আক্রমন চালায় এবং বে-পরোয়া মারধরের পর তার বিরুদ্ধে পরোকিয়ার অভিযোগ তোলে। বলা হয় হাট গোপালপুর এলাকার রাজমিস্ত্রি সুজনের সাথে রয়েছে তার অনৈতিক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে তারা শিখার কাছে ৫০ হাজার টাকার চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিলে তারা এ ঘটনা কাউকে জানাবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু শিখা তাদের দাবীর টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা আবারও এলাপাতাড়ি মারধর করে ফেলে রেখে যায়। শিখা এ অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্ম হত্যার চেষ্টা চালায় পরে আশপাশের লোকজন তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। পরে তাকে রিলায়েন্স জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে গত ৩০/০৫/২০২২ ইং তারিখ রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মামলায় অন্য যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন- পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে হৃদয় (২৩), তোরাপ আলীর ছেলে সজীব (৩০), ঝন্টুর স্ত্রী মধু খাতুন (৩৪), জহর শেখের ছেলে রাসেল (৩০),মসলেম মিয়ার ছেলে সাদ্দাম(৩০),কছিম সর্দারের ছেলে লিখন (২৫), মৃত সুলতান বিশ^াসের ছেলে রানা (৩০),মৃত ইজ্জত আলীর ছেলে কামরুল (৩০), সাধু হাটি গ্রামের ইউসুফ মোল্লার স্ত্রী তারজিনা খাতুন (৪০) এবং হাটগোপালপুর এলাকার রাজমিস্ত্রি সুজন (২৫)।
নিহত শিখার মামা শরিফুল জানান,খবর পেয়ে আমারা সেই রাতেই ঘটনা স্থলে যাই এবং কিভাবে আমাদের মেয়েকে পিটিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে তার যাবতীয় প্রমান আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখন তারা আমাদেরকে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। অথচ যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদের একজনকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। টাকার কাছে আমরা অসহায়।
মামলার বিষয়ে সার্কেল এসপি আবুল বাশার জানান, মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে প্রকৃত দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না।মামলার আইও এসআই আহছানুর রহমান জানান,আমরা আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তারা সকলেই গা ঢাকা দিয়ে আছে। গ্রাম বাসি জানায় একজন নিরিহ গৃহবধুকে এভাবে মেরে ফেলা অন্যায়। আমারা প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com