শতবছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, যার সাথে রয়েছে আবহমান গ্রামবাংলার একটি উজ্জ্বল সংস্কৃতি, সেই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।
চোখে পড়ে না শীতের মৌসুম শুরু হতেই গাছিদের ব্যস্ততা ।গ্রাম বাংলায় সাধারণত শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস দিয়ে। সারাবছর অযত্ন আর অবহেলায় বড় হওয়া খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেত শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই।
বাংলার ঘরে ঘরে লেগেই থাকত পিঠা-পুলির উৎসব। পাঠানো হতো আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতেও।তবে গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। আগের মত এখন আর খেজুরের রস নেই, নেই সেই পিঠা পুলিও। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। নেই নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগও।
কুমিল্লা গোমতী নদীর পাড়ের ইসাক মিয়া নামের এক গাছি খেজুর গাছের ছাল পরিষ্কার করে তাতে মাটির হাড়ি বেঁধে দিচ্ছেন। এসময় আলাপকালে তিনি বলেন, "আগে আমাদের দারুন কদর ছিল,মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই গৃহস্থরা আমাদের সাথে কথা পাকা করে রাখতেন ।আমরা, গাছিরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে সকালে রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতাম, আয়ও অনেক ভালো হতো।"
জৈনিক হুমায়ুন কবির নামে এক বৃদ্ধ বলেন," আগে গ্রামে- গ্রামে খেজুর গাছে মাটির হাড়ি বাধা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেতো, শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য । সাতসকালে গাছিরা রসের হাঁড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে হাক ডাক দিত। সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না এখন আর। "
শাহ শরীফ ডিগ্রি কলেজের কৃষি শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নবী নেওয়াজ মোল্লা বলেন, মাটির নিচের পানি এবং আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় খেজুর গাছে আগের তুলনায় রস কমে গেছে।
যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠায়, ভূপৃষ্ঠের রূপ পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।তিনি আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি গাছ রোপন করলে এর চাষ বাড়ানো সম্ভব।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24