কসবা-আখাউড়ার ১৫টি ইউপি নির্বাচন : কে হবেন নৌকার কান্ডারী?
শান্তনু হাসান খান।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের কসবা-আখাউড়ায় মোট ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে মনিনন্দন ও গোপীনাথপুর ইউপি নির্বাচনে প্রায় ডজনখানিক প্রার্থী এখন এলাকার মাননীয় সংসদ, সরকারের আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের কাছে ধর্না দিচ্ছেন নৌকার টিকিটের জন্য। কিন্তু মন্ত্রীর সাফ কথা একটাই- তৃণমূলে যার যার গ্রহণযোগ্যতা আছে তাকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার টিকেট দেবেন। আগামীতে যাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর আগমন না ঘটে, সে সুবাদে কারো জন্য এককভাবে আমি সার্টিফাই করবো না।
তবে একজন ইনশালাহ নৌকার প্রার্থী হবেন। যাতে কোন প্রকার সহিংসতা না ঘটে সেদিকে প্রতিটি আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে।
আখাউড়ার ৫টি ইউনিয়ন- দরখারের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান, মনিন্দনের কামাল ভূইয়া, আখাউড়া সদর দক্ষিণে হেলাল উদ্দিন স্বপন, উত্তরে জালাল মিয়া, মুগরা ইউনিয়নের মনির হোসেন আগামীতে এককভাবে প্রার্থীতা চাইবেন। তবে মনিন্দনের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ কামাল ভূইয়া অনেকটাই বিতর্কিত এলাকাতে। আর নতুন প্রার্থী খাইরুল বাশার ভূইয়া রিপু সেও প্রার্থীতা চাইবে। এলাকাবাসীরা বলেন রিপুর মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। তার বাবা সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভূইয়ার প্রভাবে নৌকার টিকেট পাওয়া যাবে না। তবে ভালো অবস্থানে আছেন সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী দিপক। জনগণের প্রত্যাশাও তাই।
দীপক চৌধুরী মনিন্দনের ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটার। পড়াশোনা গোপীনাথপুর হাই স্কুলে। পরে আখাউড়া শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ছাত্র অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার অতীতের পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার আর এলাকার মানুষের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করলে আমার নেত্রী- জননেত্রী শেখ হাসিনা ইনশালাহ আমাকে দলীয়ভাবে নমিনেটেড করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। দীপক চৌধুরী ১৯৯৭ থেকে টানা ২০০৩ পর্যন্ত এ এলাকার নন্দিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি বলেন, আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সরকারের আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক এবারও আমাকে দলীয়ভাবে নমিনিয়েশন দিতে সাহায্য করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আর পুণরায় নির্বাচিত হলে এ ইউনিয়নকে অত্যাধুনিক ও ডিজিটাইলাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো।
উলেখ করা যেতে পারে, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মফিজুর রহমান শিশু, সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে কসবা ১০টির মধ্যে কুটি ও খারেরা ইউপি নির্বাচন হচ্ছে না। বাকীগুলো মলোগ্রাম, নেহারী, বাদৈর, বিনাউটি, কাইয়ুমপুর, বায়েক ও গোপীনাথপুর নির্বাচনের তফসিল চলতি মাসের শেষ দিকে।
আলোচিত গোপীনাথপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম মান্নান। তিনিও এবার নির্বাচনে থাকতে চাইছেন। তার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিবেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগৈর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির ভূইয়া। এছাড়াও গতবারের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, এডভোকেট জহির খন্দকার, আল মামুন, তারেক মাহমুদ রুমেল ও জনৈক মজিবুর রহমান। তবে জনগণের পছন্দের তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার কাদির ভূইয়াকে ঘিরে। বর্তমান চেয়ারম্যান মান্নানকে এলাকাবাসী আদম বেপারী হিসেবে চিনে। তার অতীত কর্মকান্ড নিয়ে এলাকায় বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। এ বিতর্কিত মানুষটি ২০১৬ তে কিভাবে নৌকার টিকেট সংগ্রহ করেছে-তা নিয়ে এলাকাবাসীর প্রশ্ন থেকেই গেল দীর্ঘদিন।
গোপীনাথপুরের ৩নং ওয়ার্ডের ভোটার আবদুল কাদির পড়াশোনা করেছেন চন্ডিদার হাই স্কুলে। পরে কুমিলা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে। সে সময়ে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং ও সমাবেশের মধ্যদিয়ে আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। মাঝখানে ৩৬ বছর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ অবসরে আসার পরে সরাসরি গ্রামে চলে আসেন। এসে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েন।
২০১১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। অল্প ভোটের ব্যবধানে সেবার তিনি উঠে আসতে পারেননি। এবার ওভার কনফিডেন্ট আছে- মাননীয় মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকার টিকেট দিবেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে গোপীনাথপুরকে ঢেলে সাজাবো। আর সেটা হবে আমার মাননীয় এমপি’র দিক নির্দেশনায়। ৬০ বছরের কাদির ভূইয়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করছেন। এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত।
মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাঁহ সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের জড়িত। এলাকায় তিনি গ্রাম্য সালিশ বিচারে একজন নন্দিত মানুষ হিসেবে বেশ পরিচিত। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের প্রতিপাদ্য-“আমার গ্রাম-আমার শহর” বাস্তবায়িত করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।