হেডফোন, ইয়ারবাড ও বিভিন্ন লাউড কনসার্টে উপস্থিতির কারণে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন শত কোটিরও বেশী তরুণ-তরুণী – এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন গবেষকরা।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ব্রিটিশ জার্নাল ‘বিএমজে গ্লোবাল হেলথ’-এ প্রকাশিত গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বব্যাপী সরকারি পর্যায়ে ‘সেইফ লিসনিং’ নীতিমালার প্রচারণা চালানো এখন সময়ের দাবি।
“প্রযুক্তি, সঙ্গীত ও অনুষ্ঠান আয়োজকদেরও তরুণ-তরুণীদের এই ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে হবে। বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রমাণ মিলছে, তারা নিয়মিতই অনিরাপদ মাত্রার শব্দ সংস্পর্শে আসেন।” – উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ বলছে, আগের গবেষণাতেও দেখা গেছে, হেডফোন ও ইয়ারবাডে গান শোনার বেলায় অনেকেই নিয়মিত একশ পাঁচ ডেসিবেল পর্যন্ত উচ্চমাত্রার শব্দ বাছাই করেন, যেখানে বিভিন্ন বিনোদনমূলক ভেনুর বেলায় এটি দাঁড়ায় একশ চার থেকে একশ ১২ ডেসিবেল পর্যন্ত।
প্রাপ্তবয়স্কদের ৮০ ও শিশুদের জন্য ৭৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দের প্রাবল্য বজায় রাখার পরামর্শ রয়েছে। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ শোনা, এমনকি অল্প সময়ের জন্য হলেও, ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।” –প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বমোট কতো সংখ্যক ব্যক্তি এই ধরনের শব্দ মাত্রার সংস্পর্শে আসেন, ওই বিষয়টি বিবেচনা করতে ১২ থেকে ৩৪ বছর বয়সী প্রায় ২০ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর ৩০টির বেশি পরীক্ষা চালানো হয়।
বিশ্লেষণ থেকে তথ্য মিলেছে, বৈশ্বিকভাবেই এই সমস্যা রয়েছে এবং তরুণ-তরুণীদের ৪৮ শতাংশই এই ধরনের শব্দ মাত্রার সংস্পর্শে আসেন।
বিশ্বব্যাপী ১২ থেকে ৩৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা আনুমানিক দুইশ ৮০ কোটি। গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যকে গড় হিসেবে নিলে গোটা বিশ্বে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন একশ ৩৫ কোটির বেশি তরুণ-তরুণী।
প্রধান গবেষক ড. লরেন ডিলার্ড বলেন, “আপনার তাৎক্ষণিক কার্যকলাপের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি কী হতে পারে সেটি কল্পনা করাও কঠিন। শ্রবণশক্তি হারানোর ঘটনা সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে এবং ক্রমশ বাড়তেই থাকে।”
বিনোদনমূলক ভেনুর বেলায় শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ একশ ডেসিবেল রাখার পরামর্শ রয়েছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার। এটি নিশ্চিত করতে ‘সাউন্ড লেভেল মনিটরিং’, বাদ্যযন্ত্র ও সাউন্ড সিস্টেম অপ্টিমাইজ করা এবং ইয়ারপ্লাগ ও নীরব এলাকা ঘোষণার মতো পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
“অনেকেই এই বিষয়টি মেলাতে পারবেন যে, উচ্চ মাত্রার শব্দওয়ালা কনসার্ট থেকে ফেরার পর কান ঝাঝা করতে থাকে এবং এক দুই দিন পর এটি ঠিক হয়ে যায়।”
ড. ডিলার্ড বলছেন, এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটলে সেটি শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতিও করতে পারে।
এই গবেষণা যেহেতু তরুণ-তরুণীদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি – আর স্কুল শিক্ষার্থীদের একটি প্রজন্মে যেভাবে স্মার্টফোন ও ইয়ারবাড জীবনের অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে, ড. ডিলার্ড বলেছেন, এর জন্য প্রাসঙ্গিক শিক্ষাও প্রয়োজন।