কুড়িগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ শিক্ষার্থী ভর্তির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ষষ্ঠ শ্রেণির ৬জন এবং নবম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং লটারির ফলাফল পাশ কাটিয়ে প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক তার একক সিদ্ধান্তে ওই ৭ শিক্ষার্থী ভর্তি করান। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র শিক্ষক মফিদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব দেওয়ান এনামুল হক।জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নির্দেশে কুড়িগ্রাম মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম রোববার বিকালে তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করেছেন।সন্ধ্যায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ ৭ শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন না করেই কি ভাবে ভর্তির সুযোগপেলো তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য ভর্তি সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য লিখিত নেয়া হয়েছে। নেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও তথ্য। সব যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট দেয়া হবে।পরে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
স্কুলের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র শিক্ষক মফিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬জন শিক্ষার্থী এবং ৯ম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন জোড়পূর্বক। যা সরকারি নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।কারণ এসব শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনলাইনে কোন আবেদন করেননি। লটারি প্রক্রিয়ার ভর্তি কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষকতো বটেই, ভর্তি কমিটিও লটারি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনও শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পারেন না। এটাই ভির্তি বিধির বিধান। প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গানোর অযুহাত দিচ্ছেন। অথচ জেলা প্রশাসক স্পস্ট ভাবে লিখেছেন বিধিমতে ব্যবস্থা নিয়া যায়।
অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে বিধি লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিয়ে এসব ভর্তি করান। প্রতি বছর এমন কাজ করলেও ধরা পরেছে এ বছর।গত বছর ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনা পরবর্তিতে আদালতে গড়ায়।
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র শিক্ষক দেওয়ান এনামুল হক জানান, ৯ম শ্রেণিতে ফারহান ফুয়াদ এবং ৬ষ্ঠ শেণিতে ক শাখায় রাফসান জানি রিফাত (রোল নং-১৪),তানজিম আরেফিন আরাফ (রোল নং-১৫), নাহিয়ান ইয়ামিন (রোল নং-১৬), রাযীন মাহমুদ সরকার (রোল নং-১৯), এস এম রাহফীন ইসলাম (রোল নং-৪৪)ও ৬ষ্ঠ শ্যেণি খ শাখায় ৪৬ রোল নম্বরে ভর্তি হয় ফারদিন শাহরিয়ার লাম। ফলাফল তালিকা বহির্ভুত শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশক্রমে শ্রেণি উপকমিটির নিকট তাদের ভর্তি গ্রহণ করতে বলা হয়। ৩ডিসেম্বর থেকে ৫ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ভর্তি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে এই ৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বিধি বহির্ভুত বিবেচনা করে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতী ও দিবা শিফটে ক ও খ শাখা মিলে মোট ২২০জন, ৮ম শ্রেণিতে ২০জন এবং ৯ম শ্রেণিতে ২০জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় । ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক তাড়াহুড়ো করে ৭ শিক্ষার্থীকে ভর্তির নির্দেশদেন ভর্তি কমিটিকে। এদের কেউই ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেননি।
তিনি আরো যোগ করেন, যে হেতু এ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কদেখা দিয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে তাই নতুন করে রোববার ভর্তির অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।নতুন করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২৫জন, ৮ম শ্রেণিতে ৩জন এবং ৯ম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।
কিন্তু বিতর্কিত এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিকৃত ৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলও করা হয়নি।এমন অবস্থায় এই ৭ শিক্ষার্থীর ভাগ্যে কি ঘটবে তা কেউ নিশ্চিত না।কারণ এসব শিক্ষার্থী প্রকাশিত লটারীর ফলাফলে নাই, তারা কোনও কোটাতেও স্থান পায়নি।
সিনিয়র শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ভর্তি হওয়া চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের তারা শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক বরাবর ভর্তির আবেদন করে ভর্তির সুযোগ নেয়। লিখিত আবেদনে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোটার (এমই) কথা উল্লেখ করলেও সে কোটাতেও তাদের সন্তানরা স্থান পায়নি।ঐ কোটা ইতোমধ্যে ফিলাপ হয়েছে।সহদর কোটায় দুজন এবং যমোজ কোটায় একজন ভর্তির আবেদন করে প্রধান শিক্ষকের কাছে। অনলাইনে তাদের কোন আবেদন নেই।
একজন অভিভাবক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনার পরও এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণ বেআইনি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাবেন। ধারণা করছি, অবসরের আগে এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, ‘প্রকাশিত ফলাফলের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। সরকারি কলেজের শিক্ষকের সন্তান হলেও তাদেরকে অনলাইনে আবেদন করে লটারিতে অংশ নিয়ে টিকতে হবে। এমনকি কোটাভুক্ত হলেও লটারিতে টিকতে হবে। এর বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি কোনও বৈধ চর্চা হতে পারে না। এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা পরিপন্থি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক বলেন, ‘প্রকাশিত লটারির ফলাফলের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। যেটা হয়েছে তা বিধি সম্মত হয়নি বুঝতে পরে ঐ ৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। শুন্য আসনে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। কোন প্রকার অর্নৈতিক লেনদেন ছিলো না।
আরএইচ/অননিউজ