কুবিতে ভর্তি হল হত্যা মামলার প্রধান আসামি

★খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস ★হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন বিপ্লব চন্দ্র দাস। ★তালা ভেঙে হলে উঠার চেষ্টা ★ বহিরাগত নিয়ে ফাঁকা গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ★ ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে মনে করেন শিক্ষার্থীরা

হাছিবুল ইসলাম সবুজ, কুবি।।
২০১৬ সালের ১ আগস্টে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নিহত ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের এক চিঠির বিপরীতে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এই ভর্তিকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। এদিকে নতুন করে ছাত্রত্ব নিয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিপ্লব চন্দ্র দাস মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালের ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনকে কেন্দ্র করে গোলযোগে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ। ঘটনার তিন দিন পর বিপ্লবকে রাজধানী থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন বিপ্লব চন্দ্র দাস।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অভিযোগ রয়েছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে। সবশেষ ২০২২ সালের ১ অক্টোবর তার নেতৃত্বে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক হল বন্ধ করে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এছাড়াও গত ৩০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৩২২ নং রুমে তালা ভেঙ্গে হলে ওঠার চেষ্টা করেন তিনি ও আরো কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী। পরে শাখা ছাত্রলীগ বাঁধার মুখে ওঠতে পারেননি তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আবারও অঘটন ঘটানোর জন্য তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষকদের একটি পক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় কতদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সরিয়ে বহিষ্কৃত ছাত্র বিপ্লবকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপরই বিপ্লব বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে উপাচার্যের সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। নিজের অবস্থান তৈরি করতে স্থানীয় পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

বিপ্লবের ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসাইন সরকার বলেন, প্রথমে আমরা তাঁর ফলাফল স্থগিত করে প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছি ভর্তি করানো যাবে কিনা? পরে প্রশাসন অনুমতি দিলে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ভর্তি নিতে বলি।

এদিকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ডিন অফিসে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু বিপ্লব চন্দ্র দাস-এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি বর্তমানে ট্রায়ালে আছে সেহেতু আপনার অনুষদে এমবিএ (উইকেন্ড) প্রোগ্রামে ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কোন বাধা নেই। যদি মাননীয় আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তার ভর্তি বাতিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জেনেশুনে অশৃঙ্খল শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। অথচ ভর্তি প্রতিজ্ঞানামানুসারে বিশৃঙ্খলাকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যেকোন ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ নেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিপ্লব দাস বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। এর আগে শিক্ষার্থীকে গুলি করে মারার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তারপরেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়েছে। যদি কোনো বিশৃঙ্খলা জনিত কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন বলেন, `আমরা আইনজ্ঞের মতামত নিয়েই ভর্তি করেছি। যেহেতু মামলাটি এখনো চলমান, তাই তাঁর ভর্তি নিতে কোনো বাঁধা নেই। আদালত যদি দোষী সাবস্ত করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।‘ তবে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে এর দায়ভার কে নিবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আরো দেখুনঃ