কুমিল্লায় ধারের টাকা নিয়ে বছরজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ
আল-আমিন কিবরিয়া, কুমিল্লা |
কুমিল্লার দেবিদ্বারে পাওয়না টাকা ও রাস্তা নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে গত এক বছরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের এ দ্বন্দ্বে ফেঁসে গেছে কয়েকটি সাধারণ পরিবার। অভিযোগ উঠেছে, এসব পরিবারের কারোর ভেঙেছে বাড়িঘর, লুট হয়েছে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণ-অলংকার। নিয়ে গেছে গরু-ছাগল। আগুন লাগিয়ে দিয়েছে খামারে।
‘দেবিদ্বার উপজেলার বক্রিকান্দি গ্রাম। আজ শুক্রবার সকালে কথা হয় গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সাথে। তাদের দাবি, এ গ্রামের কাউসার ও তার ভাই মমিনের সাথে টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন দ্বন্দ্ব চলছে আব্দুল কাদেরের। কয়েকদিন পরপর বাদে সংঘর্ষ। এরই জেরে পরবর্তীতে রাস্তা নিয়েও দ্বন্দ্ব বাধে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।,
‘মনি বেগম। ভাঙ্গাচুরা বসতঘরের সামনে বসে অঝোরে বিলাপ করতে দেখা গেছে তাকে। মাথাগোঁজার শেষ সম্বলটুকু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন সংঘর্ষকারীরা। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, বুধবার আমি আমার বাপের বাড়িতে গেছিলাম পর দিন সকালে খবর পাই, আমার ঘর ও আসবাবপত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। আমার কি অপরাধ। আমার ঘরের লোকজন তো কেউই এই দ্বন্দ্বে নাই।
একই ঘটনা ঘটেছে কবির হোসেনের বাড়িতে। দেখা যায়, কবিরের স্ত্রী আকলিমা বেগম ভাঙাচোরা ঘরটিকে মেরামতের চেষ্টা করছেন। এসময় তিনি বলেন, আমার ঘর ভাঙচুর করে আলমারির ড্রয়ের থেকে দুটি স্বর্ণের কানের দুল ও দুটি চেন নিয়ে গেছে কাদেরের লোকজন। এসবের ওজন ৪ ভরি। আমি ঘরে ছিলাম। তারা আমাকেও পিটিয়েছে। যাওয়ার সময় ঘরের কারেন্টের তার কেটে নিয়েছে।,
‘এছাড়াও আবু তাহেরের ২ গরু ও নগদ ৩ হাজার টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। ফরিদা বেগমের বিল্ডিং’র জানালার কাঁচ ভেঙে দিয়েছে একই বাড়ির লোকজন। এসব লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছে অন্তত বিশ জন অস্ত্রধারী যুবক। এ সময় আতঙ্কে পালিয়ে গিয়েছিলেন তারা। এর আগের সব সংঘর্ষের একচিত্রই ছিল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।,
‘ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম বলেন, আমার ছেলেরা মমিন ও কাউসারের কাছে কাজ করেছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কাদের-কাউসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে আমাদের কি দোষ! আমরা কাদেরের পক্ষে কথা না বলায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে।,
‘বক্রিকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও মনু মিয়া বলেন, বছরজুড়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে আছে। এসব সংঘর্ষের পিছনে তৃতীয় পক্ষ ইন্দোন দিচ্ছে। দ্রুত সমাধান করে গ্রামের শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।,
‘এ বিষয়ে জানতে আবদুল কাদেরের বাড়িতে গিয়ে ও তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মমিন মিয়া বলেন, আব্দুল কাদের ও তার লোকজন দেবিদ্বারের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের অনুসারী ছিলেন। কালাম উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার সময় থেকেই আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে তারা। হত্যার দায়ে এমপি কালাম পালিয়ে গেলেও তার দোসর কাদের ও তার লোকজন এখনো রয়ে গেছে।‚
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন মো. ইলিয়াস বলেন, সংঘর্ষে সংবাদ পেয়ে সেনাবাহীনি এবং পুলিশ টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। দুই পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নিব।