টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত ৯টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আকস্মিক এই বন্যা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ৬৭ হাজার। বেসরকারি হিসেবে, এসব সংখ্যা ছাড়িয়েছে বহু গুণ। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ায় খোঁজও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না দুর্গত এলাকাগুলোর। এ দিকে কৃষি বিভাগের তথ্য, ৬০ হেক্টর কৃষি জমি আক্রান্ত হয়েছে বন্যায়। পানিতে তলিয়ে যাওয়া সবজির আবাদ সবই বিনষ্ট হয়েছে।
তবে স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে এখন পানিতে ভাসছে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এ উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। এদিকে, গোমতী নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে জেলার বুড়িচং উপজেলায়। ভেঙে যাওয়া নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত স্রোতের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িচংয়ে এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যাার পানি। রবিবার রাত থেকে অনবরত বৃষ্টি হতে থাকায় এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলায় অনেক আশ্রয় কেন্দ্রও এখন পানির নিচে। এখানে চারদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার। মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার বেশিরভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। জেলার চৌদ্দগ্রামে পানি কিছুটা কমলেও ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ ভয়াবহ কষ্টে রয়েছেন।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়। তবে নৌকা ও স্পিডবোট কম থাকার কারণে সেসব ত্রাণও সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে উদ্ধার কাজও ব্যাহত হচ্ছে প্রকটভাবে।
এদিকে পানিবন্দি পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে উদ্ধার দলসহ স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যাপ্ত নৌকা সংকটের কারণে ঢাকা থেকে ড্রাম এনে ভেলা তৈরি করে উদ্ধার কাজ চলমান রাখা হয়েছে কিছু জায়গায়। আশ্রয় কেন্দ্রে আনা বন্যার্তসহ বন্যাদুর্গতদের দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি। তবে এটি চাহিদার তুলনায় সামান্য। এজন্য মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্ট বেড়েই চলেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট। বেশিরভাগ স্থানেই মানুষ সহায়তা নিয়ে গেলেও প্রবেশ পথে জটলা বেধে থাকা ডাঙার মানুষজন কৌশলে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন বানভাসিরা। জেলার বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ না পৌঁছায় কষ্টে হাহাকার করছেন বানভাসি মানুষ।
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। পানি না কমা পর্যন্ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতেই থাকবে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত আছে।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24