নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কুমিল্লার বাসিন্দা। জানা গেছে, আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মোঃ বিল্লাল হোসেন ও মাতার নাম রোকসানা বেগম। তিনি ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম একজন সমন্বয়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সচেষ্ট নেতৃত্ব দিয়ে সুনাম কু্ড়িয়েছেন।
কুমিল্লার মুরাদনগরের স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, আসিফ মাহমুদ আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজটির বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট ছিলেন। কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ( ২০১৭-১৮ ) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আন্দোলনের সময় সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব দেখা গেছে তাকে । বিভিন্ন সময় লাইভে এসে আন্দোলনকারীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আসিফ।
আসিফ মাহমুদ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা। আসিফ সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। আসিফ এর আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। নানা অভিযোগ তুলে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ২১ জন নেতা। তাঁদের উদ্যোগেই গত বছর অক্টোবরে গঠিত হয় ছাত্রশক্তি। এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
উইকিপিডিয়ার বরাত দিয়ে জানাযায় , আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জন্ম ১৪ জুলাই ১৯৯৮। একজন বাংলাদেশী আন্দোলনকর্মী, ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা। তিনি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত আছেন।
আসিফ মাহমুদের পিতা বিল্লাল হোসেন বলছেন, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। প্রথমদিকে, পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে সে আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়িতে ফিরে আসতে অনুরোধ করে বাবা, মা ও বোনেরা। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আসিফ বলেন, আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন, আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসবো না। হয় গুলি খেয়ে মরবো না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরবো। এরপর থেকেই আসিফ মাহমুদের পরিবারে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা শুরু হয়।
তার ছোটবোন ইফাত জাহান লামিয়া বলেন, ভাইয়া ৫দিন নিখোঁজের সময় তার মা, বোনসহ পরিবারের সকলের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। ঘরে রান্নাও হয়নি, বন্ধ থাকে পরিবারের সকলের খাওয়া-দাওয়া। আমরা ঢাকাতে লাশ ঘরে গিয়েও ভাইকে অনেক খুঁজেছি। এখন আন্দোলন সফল হওয়ায় আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই এমন খুনি, ফ্যাসিবাদী সরকার আর কখনো না আসুক।
তারপর প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফের গুমের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাই। ২৪শে জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এসময় তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারো তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায়, আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয়ে আছে এসে দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদেরকে ছেড়ে দিবে বললেও পরে আর ছাড়েনি। ডিবি প্রধান হারুন সাহেব আমার থেকে ভিডিও রেকর্ড নিতে চেয়েছিলো যে সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় দিয়েছে কিন্তু আমি রাজি হইনি। ১দিনপর আবারো ফোন করে আমাদের যেতে বলে তখন তাদের গাড়ি দিয়ে আসিফসহ আমাদেরকে বাড়ি পৌছে দেয়। তিনি আরোও বলেন যে আসিফ মাহমুদ ছোট্টবেলা থেকেই একরোখা ছিল। যেখানে অন্যায় দেখতো সেখানেই প্রতিবাদ করতো।
আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হয়েছেন সে যাতে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেন এজন্য দেশবাসীর নিকট আমি দোয়া চাই। তাছাড়া তিনি এই আন্দোলনে নিহত সকলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়াসহ সকল সমন্বয়ক এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবিও করেন।
আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পাওয়ার পর সমগ্র জেলাজুড়ে বইছে প্রসংশার বার্তা। আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে কুমিল্লার গর্ব হিসেবে তুলে ধরে নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করছেন। সেই সাথে দাবি করছেন তার হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের স্থবিরতা ও বেহাল দশা কাটিয়ে দ্রুততম সময়ের মাঝে স্বচ্ছতা ফিরবে প্রতিটি বোর্ডে।