কুমিল্লা নগরীতে সড়কের পাশে লাগানো নির্বাচনী পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা মডার্ন স্কুলে পড়ুয়া দুই ছাত্রকে নির্যাতন, মারধর, হুমকি ধমকি ও তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত দুই ছাত্র বাসা থেকে বের হওয়া সহ স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছে। ভূক্তভোগী দুজন শিক্ষার্থী সম্পর্কে খালাতো ভাই এবং তারা দুজনই বাবা হারা। তাদের একজন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন অষ্টম শ্রেণিতে এবং এনশান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আদিল নবম শ্রেণিতে মডার্ণ স্কুলে পড়েন। তারা কুমিল্লা নগরীর ৩ নং ওয়ার্ড রেইসকোর্স ধানমন্ডি সড়কের দারুল খাদেম নামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সামিউলের বাবার নাম মৃত জাকির হোসেন। এনশান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আদিলের বাবার নাম মো: ফজলুল হক। তিনি আমড়াতলী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত বছর তিনি করোনায় মারা যান।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সপ্তাহ খানেক আগে স্কুলে যাওয়ার সময় দুষ্টমির ছলে সড়কের পাশে সাটানো একটি পোস্টার ছেড়েন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন। ওই পোস্টারটি ছিল সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমের। গতকাল রোববার স্কুল থেকে ফেরার পথে এনশান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আদিলের পথ রোধ করে তাকে মারধর ও নির্যাতন করেন ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমসহ আরো দুজন। পোস্টার ছেড়ার কথা অস্বীকার করে আদিল সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের নাম বলে দেয়। আদিলকে আটকে রেখে সাথে সাথে মনিরুল আলম ও তার সহযোগিরা দারুল খাদেম বাসার তৃতীয় তলার সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের ভাড়া বাসায় এসে তাকে টানা-হেছড়া করে মায়ের সামনেই মারধর করে, হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। এমন সময় মাহিনের নানা দুহাত জোর করে মনিরুলের কাছে ক্ষমা চান এবং যে বিচার-ই হউক মাথা পেতে নেয়ার কথা বলেন।
তখন মনিরুল ছয়টি পোস্টার ছেড়ার অভিযোগ করে তাদের কাছ থেকে প্রতিটি পোস্টারের ৫শত টাকা করে তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
শিক্ষার্থী সামিউল মোত্তাকিম মাহিন জানান, স্কুলে যাওয়ার সময় এমনিতেই দুষ্টমি করে আমি একটি পোস্টার ছিড়েছি। আমি বুঝতে পারিনি। সেটা সিসি ক্যামেরায় দেখে মনিরুল আলম আমার ভাইকে রাস্তায় ধরে মেরেছে এবং আমাকে ধরে নিতে বাসায় এসে মারধর কেরে টানাটানি করেছে। পড়ে নানা ভাই টাকা দেয়ার পর চলে গেছে এবং আদিল ভাইকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি ভয়ে আজকে স্কুলে যাইনি। সামিউল মোত্তাকিম মাহিন ও
এনশান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আদিলের নানা মো: শাহনেওয়াজ বলেন, আমার দুটি নাতিই এতিম। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি সব ছেড়ে তাদের সাথে থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়ি চান্দিনাতে। তিন বছর আগে মাহিনের বাবা লিভার সিরোসিসে মারা গেছেন। গত বছর আদিলের বাবা করোনায় মারা গেছে। আমার নাতি বাচ্চা মানুষ স্কুলে যাওয়ার সময় না বুঝে পোস্টার ছিরেছে। সেজন্য আমার বড় নাতি আদিলকে মেরে আটকে রেখে আবার ছোট নাতি মাহিনকে ধরে নেয়ার জন্য বাসায় এসেছিল মনিরুল আলম। আমি রোজা রেখে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে নাতিকে রক্ষা করেছি। এবং তাদের কথা মতো তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি। আমরা অসহায়!
মাহিন ও আদিলের নানু মজলে নুর বেগম বলেন, আমার দুই মেয়ে শিক্ষকতা করেন। তাদের বাবা মারা গেছে। আমরা তাদের সাথে থাকি। গত দেড় মাস আগে আমাদের বাসায় চুরি হয়েছে। আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে নাতি পোস্টার ছিরেছে বলে তাদের মারধর সহ তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। আমরা খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। আমাদের এখানে কেউ নেই। নাতি দুটি ভয়ে স্কুলে যায়নি। মামলা করবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এমনিতেই ভয়ে আছি কখন আবার কি করে। মামলা করলে নিরাপত্তা কে দিবে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
স্কুল ছাত্র আদিল জানান, স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে মনিরুল আমাকে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে বাসায় এসে মাহিনকে টানাহেচরা করেন এবং টাকা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।
আদিলের মা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি বাসায় ছিলাম না। আমার ছেলেকে মেরেছ এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে গেছে। আমার ভয়ে টাকা দিয়ে দিছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুই শিক্ষার্থী আমার পোস্টার ও ফেস্টুন ছিড়েছে। আমার কাছে সিটি ক্যামেরার ফোটেজ আছে। সেজন্য জরিমানা নিয়েছি, মারধর করিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি তদন্ত কমল কৃষ্ণ ধর জানান, শিশু নির্যাতনের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।