অনলাইন ডেস্ক।।
কুমিল্লা নগরীর ডিসিরোড এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি সেবা হাসপাতালের স্টাফদের গাফিলতির কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরবানু নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তানভীর সুমন নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত নুরবানু (৪৫) কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার কাবিলা মনশাসন এলাকার মৃত আব্দুল হকের স্ত্রী।
মৃতের মেয়ে তাসলিমা জানান, নুরবানুর জরায়ুতে সমস্যা নিয়ে গত রোববার (৩০ জুলাই) বিকেলে সেবা হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসক রুমানা পারভিন একই দিনে সন্ধ্যায় হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নুরবানুর জরায়ুর অপারেশন করে অবজারভেশনে রাখেন। অপারেশন করার সময় নুরবানুর শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। পরদিন সোমবার বিকেলে অন্য একটি রোগীর অপারেশন করা হলে নুরবানুকে হাঁটিয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার কিছুক্ষণ পরই নুরবানুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই নুরবানুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে যায়। হাসপাতালটিতে আইসিসিইউ, সিসিইউ না থাকায় সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। পরিবারের স্বজনদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। এমন সময় পরিবারের সদস্যদের শান্ত করতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর সুমন মৃতের পরিবারকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে চাইলে তারা রাতে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
নুরবানুর মেয়ের জামাই শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে আমাদের অনুরোধ করে এ ব্যাপারে কাউকে না জানানোর জন্য। বিনিময়ে আমাদের ২ লাখ ২০ হাজার দেবে। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে আমাদের ২০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ২ লাখ টাকার খালি চেক আজকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দেবে বলে জানায়। তবে চেক দিলেও টাকা দেবে ১ মাসের মধ্যে ১ লাখ করে। পরে আমরা মরদেহ নিয়ে বাসায় চলে আসি।’
এ বিষয়ে সেবা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর সুমন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না। রোগীর অপারেশন করেছে অন কলে আসা চিকিৎসক রুমানা পারভিন। অপারেশনের পর রোগী ভালো ছিল। একদিন পর তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নামানোর পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর মারা যান। এ ঘটনার পর নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে। গতরাতে নগদ ২০ হাজার টাকা আর বাকি টাকার চেক দেয়া হবে। এক মাসের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে।’
এদিকে, কুমিল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়মনীতি না মেনেই নগরীতে গড়ে উঠেছে। অথচ এসব কিছু জেনেও নির্বিকার প্রশাসন।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে সিভিল সার্জন ডা. নাসিম আক্তার বলেন, ‘এমন কোনো কিছু আমি জানি না। এমন কোনো অভিযোগও আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্রঃ সময় টিভি অনলাইন