কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গত মঙ্গলবার রাতে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর বাজারে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মিলন মন্ডল এ সময় তিনি বলেন, ভোট নৌকা বাদে কোথাও যাবে না। হরিপুর ইউনিয়নে বসবাস করতে হলে ভোট নৌকাতেই দিতে হবে। আগ বাড়িয়ে কোনো রকম রং কিংবা সিঁদুর নিতে যাইয়েন না।
আপনাদের কেউই রক্ষা করতে পারবে না। সকলের তালিকা করা হচ্ছে, ৫ তারিখে নির্বাচনের পরে দেখা হবে। কোনো সুযোগ সুবিধা আর পাবেন না। মিলন মন্ডল আরও বলেন, নৌকা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে আসবেন না। আওয়ামী লীগের রক্তের সঙ্গে কেউ বেঈমানি করবেন না। কোনো রকম আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেয়াদবি সহ্য করা হবে না। আমি মনে করি আপনাদের দাঁড়ানো ঠিক হয় নাই।
হরিপুর ইউনিয়ন একমাত্র হানিফ ভাইয়ের উন্নয়নের ইউনিয়ন। আপনারা কি দিয়েছেন যে আপনারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ান? আপনাদের দেওয়ার ক্ষমতা নাই, দিতেও পারবেন না। আমরা বলতে চাই, আপনারা যারা হরিপুরে বসবাস করছেন, নৌকার বিরোধিতা করছেন, শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন, এটাই আপনাদের বড় ভাগ্যের বিষয়। কারণ আওয়ামী লীগ অত্যাচারে বিশ্বাসী না। আপনারা শুধু ইউনিয়নের সুবিধা নেবেন। আর জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ভোট নেবেন।
তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমি ইউনিয়নবাসীকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই ৫ তারিখে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগ সরকার কিন্তু শেষ হবে না। আমরা কিন্তু প্রত্যেক মানুষকে চিহ্নিত করব। এমনও হতে পারে সরকারের যে উন্নয়ন হয়েছে আপনাদের ভোগ করতে দিব না। আপনারা নৌকার বাইরে যায়েন না, আপনাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের বিপদে কেউ পাশে দাঁড়াতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শম্পা মাহমুদ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মিলন মন্ডলের দেওয়া এই বক্তব্যের ৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শম্পা মাহমুদ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি। স্থানীয়রা জানান, তারা স্বাভাবিক পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে চান। নিজেদের ভোট পছন্দ মতো প্রার্থীকে দিতে চান। ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা এটাই এখন চিন্তার বিষয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) হাসান আলী বলেন, ভোট সাধারণ নাগরিকদের অধিকার। নির্বাচনী প্রচারণায় এ ধরনের বক্তব্য ভোটারদের প্রভাবিত করে। নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যেন বজায় থাকে এজন্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতীক) মোস্তাক হোসেন মাসুদ বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। সরকারি দলের বিরুদ্ধে আমরা কিছুই বলতে পারছি না।
শুধু এটাই নয়, তারা আরও অনেক আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। আমি রাজনীতি করি, ভোট চাইতে বাড়ি থেকে বাইরে আসার সময় আমার স্ত্রীকে বলে আসি, আমি আর বাড়িতে নাও ফিরতে পারি। এ বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কারশেদ আলম বলেন, নির্বাচনের আগে এ ধরনের বক্তব্য আমাদের কাম্য নয়। এতে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হতে পারেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, এটা অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, পঞ্চম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি হরিপুরসহ সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24