পবিত্র রমজান মাস ঘিরে এখন জমজামাট দেশের অন্যতম বৃত্ততম কুষ্টিয়ার মধুপুর কলার হাট। দেশব্যাপী এই এলাকার কলার প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৪০ ট্রাক কলা সরবরাহ হচ্ছে কুষ্টিয়ার এই হাট থেকে। দাম ভালো পাওয়া এতে যেমন লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। তেমনি ভালো বিক্রির কারণে খুশি এখানকার ব্যবসায়ীরা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার দাবি, লাভজনক হওয়ায় কলা চাষে বিপ্লব ঘটাতে নিরলসভাবে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত মধুপুর কলার হাট। প্রতিদিনই বসে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই কলার হাটটি। খুব সকাল থেকে এই হাটে সবরি, চাপা সবরি, সাদা সবরি, জয়েন্ট কলা, চাম্পা কলাসহ বিভিন্ন নামের কলা নিয়ে আসতে থাকে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার কৃষক ও ফরিয়া ব্যবসায়ীরা। পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে এখানকার কলার চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুন। বর্তমানে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৪০ ট্রাক কলা সরবরাহ হচ্ছে এই হাট থেকে। এতে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। কষ্টার্জিত ফলের ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। শুধুমাত্র কুষ্টিয়া এলাকার কলাচাষিই নয় পাশের ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বিক্রির জন্য কলা নিয়ে এই হাটে আসেন কলা চাষিরা।
কলাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশি লাভ হওয়ায় তারা নিয়মিত ভাবেই এই কলার চাষ করে থাকে। আর রমজানকে সামনে রেখে অন্যান্য সময়ের চাইতে বেড়েছে কলার চাহিদা। আর চাহিদা বাড়ার কারণে এই কলার বাজারও বেশ চড়া। তাই এখানে কথা বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা।
কলাচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ১০ বছর যাবৎ কলার আবাদ করেন। প্রতিবছরই তিনি ১০ বিঘা জমিতে চাপা কলার আবাদ করেন। এই কলার খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ভালো। তাতে করে তিনি বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৫ লাখ টাকা লাভ করতে পারেন।
হাসান জানান, একমাত্র কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া কলা আবাদে ঝুঁকি কম। তা ছাড়াও কলা আবাদে পরিশ্রম এবং খরচ দুটোই কম। এমনিতেই এখন কলার চাহিদা বেশি তার ওপর আবার রমজান মাস চলছে সেই কারণে বাজারে কলার ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। যে কলা কিছুদিন আগেও ৬ থেকে ৮ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে। রমজানকে ঘিরে সেই কথা এখন ১৫ থেকে ১৭ চাকা হালি পাইকারি ভাবেই বিক্রি হচ্ছে। আর এই হাটে কৃষকেরা সরাসরি কলা বিক্রি করতে পারার কারণে তারা নিজেরাই লাভবান হয়।
প্রতিদিনই খুব সকালেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কলা কিনতে মধুপুর কলার হাটে আসে ব্যাপারীরা। এখানকার কলা খুব সুস্বাদু। দেশব্যাপী এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। মধুপুর হাটের কলাই লাভও হয় ভালো। এ জন্যই দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে কলা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন বলে জানান তাঁরা। তবে কৃষকেরা ভালো দাম পেলেও এবার কলার দাম অনেক বেশি বলেও দাবি তাদের।
শাহাদাৎ হোসেন নামের ঢাকা থেকে আসা এক ব্যাপারী জানান, এখানকার মাটি কথা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সেই সঙ্গে স্বাদেও খুব ভালো এবং এখানকার কলায় ক্যামিকেলের ব্যবহার না হওয়ায় এর চাহিদা ভালো। সেই কারণেই নিয়মিত ভাবে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে ঢাকা বিভিন্ন আড়তে নিয়ে বিক্রি করি।
এই হাটের ইজারাদার কাজী আব্দস সাত্তার জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলে আসছে এই মধুপুর কলার হাট। বর্তমানে এই হাট থেকে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা রাজস্ব পায় সরকার। তাই এখানে আসা দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যাপারী ও কৃষকের নিরাপত্তা দিতে তারা সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এই হাটের জায়গা বৃদ্ধিসহ সংস্কারে দাবি তাঁদের।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে এবার কলার আবাদ হয়েছে।
কুষ্টিয়া কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, এখানকার কলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও সহজ লোভ্য একটি রসালো ফল। কুষ্টিয়া জেলায় উৎপাদিত কলার দেশব্যাপী অনেক চাহিদা রয়েছে। মধুপুর কলার হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রচুর কলা সরবরাহ হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। রসালো এই ফলের বিস্তার ঘটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।