কুষ্টিয়ার মিরপুর মার্জিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি’র দেয়া বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ালীগীরে মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঘটনার পরের দিনই একই এলাকায় ইনুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে করা হয়েছে প্রতিবাদ সভা। এবং সেখান থেকে জাসদকে প্রতিহত করারও ঘোষনা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। এনিয়ে ওই এলাকায় জাসদ এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতি মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুক হক ইনুর ওই বক্তব্যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে আওয়ামীলীগ ও তার অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে দেখা গেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, সেখানকার রাজনীতিতে যে শান্তির সুবাতাস বইছিলো, জাসদ সভাপতির উস্কানীমুলক এসব বক্তব্যে সেখানে আবার ও মারামারি হানাহানির সম্ভবনা তৈরী হয়েছে।
তবে জেলা জাসদের দাবী হাসানুল হক ইনু নিদিষ্ট কোন ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে তার বক্তব্য দেন নাই। যারা আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় থেকে টেন্ডারবাজি, গুন্ডাগিড়িসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে তাদের উদ্দেশ্যে এই বক্তব্য দিয়েছেন ইনু। বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে জানাযায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে এক জনসভার আয়োজন করেন জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল জাসদ। বিকেল ৪ টার সময় ওই ভবনের উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আপনারা ভোট করবেন ভালো, কিন্তু লাঠির জোর ঠিক করেন, আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী করেন, প্রত্যেকে দুইটি করে লাঠি বানাবেন, আপনারা ভোটও দিবেন লাঠিও রাখবেন। আমরা মারামারি করবো না, কিন্তু ওই শয়তানের দল যদি ভোট কাটতে আসে, এবার কপালে দুঃখ আছে। আওয়ামীলীগের ভোটের সাথে থাকবো ঠিক আছে, কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন ভোট কেটে নিবেন আর আমি ইনু মুখ বন্ধ করে থাকবো, সেই দিন আর নাই। আমার মুখ খুললে সহ্য করতে পারবেন কিনা ভেবে দেখেন।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ইনু বলেন, আপনাকে নেতা মানি, জঙ্গি, জামায়াত, রাজাকার আর বিএনপি এদেরকে মোকাবেলা করার করনে আমি আপনার পাশে আছি। এখানে আমি কোন আপোষ করবো না। দলবাজ, দুর্নিতিবাজের সিন্ডিকেটকে আমি প্রতিরোধ করবোই। এটা জাসদের নিতি আমার কিছু করার নাই। তিনি বলেন বিএনপি আমার কথায় রাগ করে। কিন্তু বিএনপির সাথে আমার কোন সমস্যা নাই। এই ইউনিয়নের কোন বিএনপির লোক বলতে পারবে আমি বিএনপির কোন ক্ষতি করছি। আমি জানি তারা আমারে ভোট দেয় নাই তবুও কারো ক্ষতি নাই। এসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের ওমর চেয়ারম্যান একটা ভালো লোক, কিন্তু আল্লাহ’র দরবারে যেমন শয়তান আছে, কুর্শাতেও তেমন একটা শয়তান আছে, মিরপুরের ও একটা শয়তান আছে। ওমর চেয়ারম্যান তাদের পা ধুয়ায়ে দিলেও তাদের কাছে ভালো হতে পারবেন না। ভোটের সময় আমি এলাকায় থাকবো, প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষ ভাবে কাজে করে সেটা আমি খেয়াল রাখবো। সমস্যা প্রশাসন নয়, কুষ্টিয়ায় একটা শয়তান আছে ইবিলিশ, তারা কিছু টাকা দিয়ে খামচা খামচি করতে করতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর এই বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ইনুর ওই বক্তব্যেও পরের দিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একই স্কুল মাঠে কুর্শা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আয়োজনে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। সেই প্রতিবাদ সভায় জাসদকে প্রতিরোধ করার ঘোষনা দেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। এবিষয়ে কুর্শা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হান্নান মন্ডল বলেন, ইনুর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। যতক্ষন পর্যন্ত ইনু আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে ক্ষমা না চাইবেন ততক্ষন আমরা যেখানে জাসদের লোকজন দেখবো সেখানেই প্রতিহত করবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, আমি তার বক্তব্য শুনেছি, তিনি মুলত শয়তান হিসেবে যাদের বোঝতে ছেয়েছেন, সেই শয়তানদের উপর ভর করেই তিনি এমপি হয়েছেন। আর কে শয়তান আর কে ভালো তা সাধারন মানুষ জানে। এখন ইনু সাহেবে বাশের লাঠি তার দরকার কেনো? ইনু তো ৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র ও স্যালেন্ডার করেননি। জাসদ গন বাহিনি তৈরী করে সেই অস্ত্র দিয়ে নিরিহ মানুষদের উপর নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে, সন্ত্রাস, রাহাজানি লুটতরাজ, ধর্ষনসহ সবই করেছে। সেই অস্ত্র এখনো তার কাছেই আছে। এই লাঠির কথা বলে সে নির্বাচনের আগে অস্ত্র নামাবে, এই হচ্ছে আসল ঘটনা। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে উপজেলা আওয়ামীলীগের এই নেতা বলেন, এর আগের নির্বাচনে ইনু সাহেব জাসদ গনবাহিনীর সহযোগীতায় আমাদের কমীকে হত্যা করেছিলো। সেই লাশের রাজনীতি যেন সে না করে।
জাসদ সভাপতির বক্তব্য এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জাসদের বক্তব্য জানতে চাইলে, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, আমার সরকারের একটা অংশ। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক ভাবে দেশ পরিচালনা করার জন্য জোট করেছিলাম। জনগনের আসা আকাঙ্খার প্রতিক হচ্ছে শেখ হাসিনা। কিন্তু ঘুষ, টেন্ডারবাজী, দলবাজী, গুন্ডাতন্ত্র, স্বৈরাতন্ত্র, বা স্বৈরাতন্ত্রের আকারে দেশ পরিচালনা করা হবে, এসবের জন্য ১৪দলীয় জোট করিনি। যদি আওয়ামীলীগ এসব না করে থাকে তাহলে তাদের তো গায়ে জ¦ালা বাধার কথা নয়। আওয়ামীলীগ দুর্ণিতী করেছে বা টেন্ডারবাজী করেছে এমন কোন কথা হাসানুল হক ইনু বলেনি। যারা ক্ষমতাশীন দলের ছাতার নিচে থেকে এসব কাজ করছে তাদের প্রতিহত করার কথা বলেছেন ইনু সাহেব। আর তারা যদি এসব গায়ে পেতে নেয় তাহলে আমরা ধরেই নেবো তারাও এসব কর্মকান্ডের সাথে অংশগ্রহন করছে। আর তারা এসব কাজ না করলে হাসানুল হক ইনুর সাথে তারাও একমত পোষন করবেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ২৪।।