কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলাতে আইন অমান্য করে ওভার লোড নিয়ে শহরে বা গ্রামে বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫শত টি ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক। তবুও প্রশাসন নিরব। এসব যানের চাকার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক এখন ভেঙেচুরে একাকার। ফলে প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। প্রাণ হারাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষ। ৭ ঘন্টায় কুষ্টিয়ায় পৃথক ২টি ঘটনায় ড্রাম ট্রাকে পিষ্ট হয়ে ৬জন নিহত হয়েছে। কেবল সড়কের ক্ষতি নয়, অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। বছর শুরুতেই গত দুইদিনই বালুবাহী ট্রাকের চাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে নারীসহ ৮জনের বেশি। দন্ডবিধিতে কোন সরকারি সম্পদের ক্ষতি করলে এর শাস্তি বিধান নিশ্চিত করা আছে। ৪৩১ ধারা মোতাবেক সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন দন্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের জন্য দায়ি ব্যক্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেলসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। অথচ রহস্যজনক কারণে প্রশাসন ও পুলিশ কেন নীরব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার শহরতলীর রানাখড়িয়া-কদমতলা, তালবাড়িয়া, জুগিয়া-বারখাদা-ভাটাপাড়া, হরিপুর সেতু-মন্ডলপাড়া, কুমারখালীর মীর মশাররফ সেতু এলাকা এবং কুমারখালী ও খোকসার বিভিন্ন সংযোগ সড়কের। এরমধ্যে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া ভাটাপাড়া সড়ক গত ৫ বছরে দুবার পুননির্মাণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভার নিয়ে ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি এখন বেহাল। এ সড়কে চলা ট্রাকের বেশির ভাগই কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম ও তার স্বজনদের। এ কারনে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। এ দুটি বালুমহাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫শত থেকে ৭শত গাড়ি বালু জেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক নামছে নদীর তীরে। প্রতিটি ১০ চাকার ট্রাক বা ডাম্পার বহন করছে অন্তত ৪৫-৫০ মেট্রিক টন বালু। ছয় চাকার ডাম্পার বহন করছে ২৫-৩০ টন। পাঁচ টন বহন ক্ষমতার ট্রাকে বালু যাচ্ছে ১১-১৪ টন। আর অনভিজ্ঞ চালকরা বেখেয়াল ভাবেই চালাচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক। কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রয়োগ না করে শুধু মোটরসাইকেল ধরপাকড় করছে সংশ্লিষ্টরা। এলাকাবাসী জানায়, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। ওভার লোড বহন ও অবৈধ যানবাহন পরিচালনার বিষয়ে বক্তব্য গ্রহনের জন্য বালুমহালের ইজারাদার মহিদুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সড়কের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ ওভার লোড বহন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তারা একাধিকবার জানিয়েছেন।
বিআরটিএ কুষ্টিয়ার সার্কেলের সহকারী পরিচালক এটিএম জালাল উদ্দিন বলেন, ওভার লোড বহন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।