কুষ্টিয়ায় শেষ হলো তিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি।।

একতারা, দোতারা আর ঢোল বাঁশির সুরে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিলো ফকির লালনের ভবের হাট। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি আধ্যাত্মিক এই বাণীকে সামনে নিয়ে দৌলপূর্ণিমা উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে তিন দিনের লালন উৎসব শেষ হলো বৃহস্পতিবার।
নিজেকে চেনা, অজানাকে জানার জন্য কয়েক দিন ধরে অবস্থান নেওয়া সাধু ভক্তরা বলছেন, অর্জিত লালন শিক্ষা নিজের ও সমাজের শান্তির পথ হবে।

সাধুর হাট ঘুরে দেখে গেছে, বৃহস্পতিবার শেষ দিনে জমজমাট হয়ে উঠেছে লালন উৎসব। দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালন ভক্ত, বাউল, ফকির ও অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে অবস্থান নিয়ে লালনের অহিংস জাতপাতহীন মানব-মুক্তির বাণী প্রচার করে চলেছেন। লালনের রীতি অনুযায়ী অধিবাস, কাল বাল্য ও পূর্ণ সেবা শেষ করে আখড়াবাড়ি ছাড়বেন সাধু ভক্তরা।

লালন গবেষক, জ্যৈষ্ঠ লালন অনুসারী ফকির নহির শাহ বলেন, জীবের শিক্ষার জন্য সাঁইজি লালন নিজেই এই উৎসব করতেন। মেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাড়তি যোগ হলেও সাধুদের মূল অনুষ্ঠান সাধুসঙ্গ লালনের রীতিতেই হয়। পূর্ণিমা তিথীতে অধিবাস হয়। তারপর বাল্য সেবা ও পূর্ণ সেবা শেষ করে তারা সাঁইজির ধাম ছেড়ে যাবেন।

খুব কাইন্দিছি (কান্না), কবে যাব সাঁইজির ঘরে। আজ আশা পূরুণ হয়চে, এখন শান্তি লাগচে। কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা নজিরা ফকিরানী। ৭৬ বছরের অসুস্থ শরীর নিয়ে চাচাতো বোন বেগম ফকিরানীর সঙ্গে এসেছেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে। আখড়াবাড়ির এক পাশে ক্লান্ত শরীরে পা মেলে বসে থাকা নজিরা বলেন, করোনায় দুই বছর বন্ধ ছিল সাঁইজির ঘর। এখন সব খোলা। শুধু নজিরা-বেগমরাই নন, দীর্ঘ দুই বছর পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধুভক্তরা কুষ্টিয়ায় ছুটে এসেছেন। খুঁজে ফিরছেন সাঁইজির প্রেম-ভালোবাসা। সাঁইজিকে আত্মায় ধারণ করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ফলে আখড়াবাড়িতে আবার ফিরেছে প্রাণের স্পন্দন।

আরো দেখুনঃ