কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট ইউনিয়নের বানুরকুটি গ্রামে এক ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমিজমা দখল করে প্রাণনাশের হুমকীর অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটনের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তাহীনতায় ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি প্রাণ ভয়ে এলাকা ত্যাগ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, দুই পক্ষের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন ও তার পরিবারের লোকজন স্থানীয় একটি পক্ষের হয়ে প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির উচ্চ আদালতে মামলাধীন ৩৫ শতক জমি জবরদখলে সহায়তা করে। এনিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছোটন স্থানীয় ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর পরিবারটির নিজ নামীয় আরো ২৪শতক জমি দখল করে চারদিকে ইটের প্রাচীর দিয়ে কলাগাছ লাগাচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন। তিনি জানিয়েছেন আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। অপরদিকে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, ছোটনের লোকজন প্রতিদিন ২০/২৫টি মোটর সাইকেলযোগে ওই পরিবারের লোকজন বাড়িতে ফিরছে কিনা খোঁজখবর নিচ্ছে। সেখানে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। আর বলছে, আমার নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করো। তোমাদের সবাইকে মেরে লাশ গুম করে দিবো এবং নিউজ করার সাধ মিটিয়ে দেবো। ইউএনও-থানার ওসি আমাদের হাতের মুঠোয়! তোমার স্বামী কতদিন পালিয়ে বেড়াবে। তোমাাকেসহ তোমার দুই মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। এসময় ছোটনের সাথে ছিল, তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, নজরুল ইসলাম, ফজলুল হক, আউয়াল হোসেন, হাসর উদ্দিন, আব্দুর রহিম, কমল মিয়া, বাবু মিয়া, ডাবলু মিয়া, জুয়েল হোসেন, আসাদ হোসেন, দানেস কামারসহ অজ্ঞাত আরো অনেকে।
অভিযোগকারী আনজিনা বেগম জানান, ছোটনের নেতৃত্বে গত ১ ডিসেম্বর আমার ক্রয়কৃত ৩৫শতক জমি জবরদখল করে গাছপালা কেটে উক্ত জমিতে দুটি ঘর নির্মাণ করে। আমারা সেখানে গেলে মারপীট করে হত্যাচেষ্টা করে। পরে আমরা প্রাণভয়ে পালিয়ে যাই। ছোটনের বাবা নুরন্নবী চৌধুরী খোকন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং তার বড়ভাই শোভন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক বহিষ্কৃত সভাপতি হওয়ায় আমরা ইউএনও মহোদয় এবং ওসির কাছে বিচার চেয়েও জমির দখল পাইনি। বাধ্য হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে ৪ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করি। এতে ছোটন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্বামী মিজানুর রহমান মিজুর নিজ নামীয় আরো ২৪ শতক জমি জবরদখল করে। সেই জমির চারদিকে তারা প্রাচীর দিয়ে গাছ লাগানোর চেষ্টা করছে। সংবাদ সম্মেলন করার পর আমাদেরকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকী দেয়ায় আমরা ভযে বাড়িতে ফিরতে পারছি না। আমার শশুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জবরদখলকৃত জমি উদ্ধারসহ বিবাদীগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনসহ সুবিচার প্রার্থনা করছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন জানান, আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। বাদী মিজানুর রহমান মিজু দুষ্ট প্রকৃতির লোক। সে একজন ভূমিদস্যু। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আমার ও আমার পরিবারের মান-সম্মান নিয়ে সে টানাটানি করছে। যারা চিহ্নিত ভূমিদস্যু তারাই নিরিহ সাজছে। আমি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। এটাই আমার দোষ। আপনারা ঘটনাস্থলে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।