গত ৪৮ দিনে ৩বার প্লাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ি। প্রথমে গত ২রা জুলাই, এরপর এক মাসের ব্যবধানে ২ আগস্ট এবং সর্বশেষ ১৮ দিনের ব্যবধানে ২০ আগস্ট মঙ্গলবার আবারও প্লাবিত হলো খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল। ঘন ঘন প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। ঘরবন্দি হয়ে আছে হাজারো পরিবার।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় জনপ্রতিনিধিরাও এলাকাছাড়া। ঘাপটি মেরে আছেন অর্থবানরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে শুকনা খাবার। যা যথেষ্ট নয়। এছাড়া খোঁজ নিচ্ছেনা কেউ। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি এবং মহালছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে বসত-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা সদরের গঞ্জপাড়া, মুসলিমপাড়া, মেহেদীবাগ, রুইখই চৌধুরীপাড়া, শব্দমিয়া পাড়াসহ নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দীঘিনালার মেরুং, হাজাছড়া, কবাখালীর হাচিনসনপুর, পাবলাখালী প্লাবিত হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে আরও ৬ শতাধিক পরিবার। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে। পানছড়ি উপজেলার পুরান বাজার, শান্তিপুর, রাবার ড্যাম এলাকা, পুজগাং,কলেজ গেইট-সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বন্দী হয়ে আছে ৩ শতাধিক পরিবার। প্রতি বছর কয়েকবার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয়রা। আগে যেখানে ১০-১২ বছরে একবার বন্যা হতো এখন সেখানে প্রতিবছর ২-৩ বার বন্যা হওয়াকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন তারা। এজন্য নদীর তলদেশ ড্রেজিং, পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থার উপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
এছাড়াও টানা বৃষ্টিতে কিছু কিছু জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। সকালে জেলা সদরের হাসপাতাল সংলগ্ন শালবন গেইট এলাকায় পাহাড় ধসে সড়কের উপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ৩ ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। শালবনের ১৮ পরিবার এলাকায় এবং কুমিল্লাটিলায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সচেতনতার উপর জোর দিতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে বন্যা, পাহাড় ধসসহ যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় এতে ফায়ার সার্ভিস, সড়ক বিভাগ, রেড ক্রিসেন্ট এবং স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ্#৩৯;খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীর ৩৪.৫৫ কিলোমিটার এবং মাইনি নদীর ২৩.৬০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে আশা করি খাগড়াছড়িবাসী বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। বর্ষাকাল হওয়ায় বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে ৯৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮টি। বন্যার্তদের জন্য শুকনা খাবারের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর পর ৩বার বন্যার কবলে পড়ায় খাগড়াছড়ি সার্বিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। নদীর তলদেশ ড্রেজিং করা হলে এ সমস্যার লাঘব হতে পারে।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24