খাগড়াছড়িতে প্রায় এক বছর ধরে ভাড়ায় চলছে আনন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারায় বাতিল হয়ে গেছে পিইডিপি-৪ এর আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরের এই প্রকল্প। যার বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮৭ লাখ টাকা। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক এবং অভিভাবকদের।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আনন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ মন্দির কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বিদ্যালয় নির্মাণ কার্যক্রম। ফলে শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণ হুমকির মুখে পড়ে। তখন ৪ই ফেব্রুয়ারি মানবজমিনে এ বিষয়ে সংবাদও প্রকাশ হয় ফলাও করে। কিন্তু এর কোন সমাধান করতে পারেনি প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ।
আনন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পিইডিপি-৪ এর আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরের। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিগত বছরের ৩রা নভেম্বর পুরাতন ভবন ঠিকাদারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসময় বিদ্যালয়ের পাঠদান চলমান রাখতে ৭ মাসের সময় নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। তখনই বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ মাস সময় অতিবাহিত হলেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ এলজিইডি।
বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জটিলতা দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়ে গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর চিঠিও দিয়েছেন আনন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলি ত্রিপুরা। চিঠিতে তিনি যথাসময়ে ভবন নির্মাণ না হলে বিদ্যালয়ের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ১৫ই জানুয়ারি দুদফা চিঠিও দেয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার পক্ষ থেকে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু এবং শেষ করতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল ঐ চিঠিতে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় নির্মাণের সাব ঠিকাদার মো. হাবিব বলেন, 'আনন্দ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করতে আমাদের শ্রমিকরা সেখানে গিয়েছিল। শ্রমিকরা লেবারশেট বানাতে গেলে মন্দির কমিটির লোকজন তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা শ্রমিকদের মারতে চড়াও হয়। লেবারশেট আর বানাতে পারিনি। ৯ মাসেও আমাদের লেআউট দিতে পারেননি এলজিইডি। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।'
আনন্দ নগর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল দে বলেন, 'আনন্দ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আমাদের মন্দিরটি পাশাপাশি রয়েছে। মূলত আমরা এলাকাবাসী এখানে বিদ্যালয়ের জন্য জায়গা দান করেছিলাম। এমনিতেই এখানে জায়গা কম রয়েছে। এর মধ্যে এখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ হলে মন্দিরটি ঢেকে যাবে। এজন্য এলাকাবাসীসহ আমরা বিদ্যালয়টি এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র স্থাপন করতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর দাবি জানিয়েছিলাম। তবে ডিজাইন পরিবর্তন করে এখানেই বিদ্যালয়টি স্থাপন করা যাবে বলে জানান তিনি।'
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রাজু আহমেদ বলেন, ‘সমস্যাটি মূলত স্থানীয়দের। বিদ্যালয়ের যে জায়গা দেখিয়ে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে এর বাইরে কাজ করা সম্ভব না ইতোমধ্যে আমাদের ঠিকাদার সেখানে কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ডিজাইন পরিবর্তন করে সাইক্লোন সেন্টারের মতো নিচে খালি রেখে করার প্রস্তাব পেয়েছি। এটি শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে রেজুলেশন হয়ে আসলে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে কাজ চলমান রয়েছে।'
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আনন্দ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে বিদ্যালয় ও মন্দির কমিটির মধ্যে জায়গা নিয়ে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত বিদ্যালয়ের যে জায়গা দেখিয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানেই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করার নিয়ম রয়েছে। এর বাহিরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। প্রয়োজনে ডিজাইন পরিবর্তন করে এখানেই বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ হোক সেটা আমরা চাচ্ছি। কাজ দ্রুত শুরু করতে পারলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী উপকৃত হবে।’
সূত্র : বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ ডট কম
এফআর/অননিউজ