প্রায় দুই বছর ধরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। নিয়োগের ২’শ ৫৮ টি শিক্ষকের শূণ্য পদের পাশাপাশি এরই মধ্যে আরো ১’শ ৫০টি সহকারি শিক্ষকের পদ শূণ্য হয়েছে। এছাড়া পুরো জেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে ১’শ ৩৫টি।
এ অবস্থায় সংক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১ সালের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী খাগড়াছড়ি সদরের আওঅং মারমা, পিতা: সানু মারমা, সাং- পানখাইয়াপাড়া, রোল নং-১৯৫৯, এনআইডি নং ৬৯০০৮৯০৯৩৭; খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জনস্বার্থে তাঁর আবেদন পেশ করেন। এতে তিনি চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করেন।
তিনি তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’র সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের কোন প্রতিনিধি থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ওই সিদ্ধান্তের ১৫ (ঝ) নং কলামে উল্লেখ আছে যে, ‘তিন পার্বত্য জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পদে জেলা পরিষদের প্রবিধানের আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রবিধানে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির বিষয়টি না থাকায় নতুন করে বিষয়টি সংশোধন করার প্রয়োজন নাই’। কিন্তু তারপরও চলতি বছরের ২১ মার্চ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১নং বিবাদী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর পত্র প্রেরণ করেন।
যেহেতু বিষয়টি বেআইনী এবং ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৮ সালে সংশোধিত পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলা পরিষদের বিদ্যমান প্রবিধান ও ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘শান্তিচুক্তি’র ধারার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় তাই এই বিষয়ে স্থগিতাদেশ কামনা করেন, আদালতে আবেদনকারী আওঅং মারমা।
তাঁর আবেদনটি আমলে নিয়ে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে খাগড়াছড়ি’র যুগ্ম জেলা জজ মাহমুদুল ইসলামের আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ প্রদান করেন। আদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাসের ৮ তারিখ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন।
খাগড়াছড়ি আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আব্দুল মোমিন জানান, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’ এবং ১৯৯৬ সালে প্রণীত ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি’র প্রবিধান অনুযায়ী যে কোন ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিষদ চেয়ারম্যানের এখতিয়ার সুস্পষ্ট করা আছে। সেই মতে ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান ২’শ ৫৮টি শূণ্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ করার লক্ষ্যে বাছাই ও নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়। ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮’শ ৪২ জন বৈধ আবেদনকারী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগ কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসক কিংবা তাঁর প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করার বেআইনী শর্ত বাতিল করার অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।