কুষ্টিয়ার মিরপুরে গর্ভবতী স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামী শাহিনুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি শাহিনুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শাহিনুল মিরপুর উপজেলার নওদা খাড়ারা গ্রামের শাজাহান মালিথার ছেলে। হত্যাকাÐের সাত বছর আগে নিহত চম্পা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ৭ মাসের অন্তঃসত্ত¡া থাকা অবস্থায় আসামি তার নিজ বসতবাড়ির শোয়ার ঘরে স্ত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করে।
অপর দিকে কুষ্টিয়া সদর শহরের রেজাউল হত্যা মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি জিতু, মিতুল ও খলিল উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি জুয়েল পলাতক রয়েছেন। যাবজ্জীবন দন্ প্রাপ্তরা হলেন কুষ্টিয়া জেলা শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার শহীদ লিয়াকত সড়কের আব্দুল মোতালেবের ছেলে খলিলুর রহমান। একই এলাকার জামিরুল ইসলাম জাম্বুর ছেলে মীর সাইমুম ওরফে জিতু, মৃত খাদিমুল ইসলাম টুলুর ছেলে জুয়েল রানা এবং মজিবর রহমান জিন্নাহর ছেলে মিতুল। এ মামলায় ৫ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে শাহিনুল ইসলাম তার স্ত্রী চম্পার শাড়ি ও ঘরের বেড়ায় কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে চম্পার শরীরের অধিকাংশ স্থান আগুনে ঝলসে যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চম্পার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত চম্পা খাতুনের চাচা ও ভেড়ামারা উপজেলার ভাটপাড়া এলাকার আইজুদ্দিনের ছেলে শাহাদাত আলী শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আদালত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৩ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ধার্য তারিখে আদালতের বিচারক আসামি শাহিনুলকে ফাঁসির আদেশ দেন। আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরই দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, গর্ভবতী স্ত্রীকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় স্বামী শাহিনুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়েছেন আদালত। এ সময় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আদালত সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে রেজাউলের গলাকাটা মরদেহ একটি ড্রেনে দেখতে পায় স্থানীয়রা। এর চার দিন আগে আসামি জুয়েল রেজাউলের নিকট একটি মোবাইল রেখে ৩০০ টাকা নেন। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে মোবাইল ফেরত চান জুয়েল। পরে ২১ অক্টোবর রাতে জুয়েল ও জিতু রেজাউলকে ডেকে নিয়ে যান। পরে আসামিরা ওই রাতেই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে ড্রেনে ফেলে দেন। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ রেজাউলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠান। এ ঘটনায় ২২ অক্টোবর নিহত রেজাউলের বড় ভাই রবিউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খবির আহমেদ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত এ মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে ১৩ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত ধার্য তারিখে আদালতের বিচারক মামলার চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন।
আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, রেজাউল হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ মামলায় ৫ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি পলাতক রয়েছেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।