ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮২ জন। একইসঙ্গে, ইসরায়েলি সরকার গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফাহতে বিশাল সংখ্যক মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা প্রকাশ করলে নতুন করে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দিনভর চালানো হামলায় রাফাহ ও দেইর আল-বালাহসহ বিভিন্ন এলাকায় শিশুসহ অসংখ্য নিরীহ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। দেইর আল-বালাহতে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে মানবিক সহায়তা নিতে অপেক্ষারত অবস্থায় ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু ও ৪ জন নারী ছিলেন।
হামলার সময় পাশেই থাকা ইউনিসেফের এক প্রতিনিধি এই দৃশ্যকে “অত্যন্ত মর্মান্তিক” ও “শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ অমানবিক” বলে মন্তব্য করেন। এই ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ এক ঘোষণায় বলেন, প্রাথমিকভাবে রাফাহ অঞ্চলে ৬০ হাজার গাজাবাসীকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরে পর্যায়ক্রমে দুই মিলিয়ন মানুষকে সেখানে পাঠানো হবে। তিনি দাবি করেন, এই পরিকল্পনায় গেলে তারা আর গাজা ছাড়তে পারবে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে, জানিয়ে দেয় তারা এর বাস্তবায়নে অংশ নেবে না।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে UNRWA এই পরিকল্পনাকে "মানবতাবিরোধী শহর" গঠনের অপচেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি একটি আধুনিক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের প্রতিচ্ছবি হতে পারে।
এদিকে, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই পরিকল্পনার আওতায় হামাস ১০ জন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির আশা করছে।
তবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি। ইসরায়েল বলছে, হামাসকে অস্ত্র ফেলে প্রশাসনিক ক্ষমতা ছাড়তে হবে। অন্যদিকে হামাস পুরো গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়।
প্রায় নয় মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের ফলে গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭,৭০০ জনের বেশি। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার চরম সংকট দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এই অবস্থায় গাজার মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মানবিক সহায়তা প্রবাহ অব্যাহত রাখা ও একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
সূত্র:বিডি২৪লাইভ
আ/অননিউজ২৪