ঝিনাইদহের কৃষকদের স্বপ্ন এখনো পানির নিচে ভাসছে। চারিদিকে কেবলই হা-হুতাশ। ধানের ক্ষেত,সবজি, বীজতলাসহ সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। রসুন,মরিচ, পেয়াজ, সরিষা, গম ও আলু রোপনের পর পনিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ সব ফসলের ভবিষ্যত নেই। এ ভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবার নতুন করে প্রস্তুতি নেয়ার সামর্থও অনেক কৃষকের নেই। ফলে দায় দেনায় জড়িয়ে এ বছর পথে বসার উপক্রম হবে কৃষকরা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য রীতিমতো উদ্বেগজনক। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে জেলার ৩ লাখ ৫৬ হাজার কৃষক পথে বসেছে। তাদের চলতি আবাদ মৌসুমে ৪১ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শত শত হেক্টর জমির পেয়াজ ও বোরো ধানের বীজতলা জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে। নতুন করে শুর করার মতো আর্থিক সঙ্গতি অনেকের নেই। এ সব কৃষক পরিবারের এখন মাথায় হাত। ফসল না হলে আগামী দিনগুলোতে কিভাবে সংসার চালাবেন এই চিন্তায় অনেকে বিপর্যস্ত। ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ক্ষেত। জেলায় ৭৯০২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে এ বছর জেলায় সবজির দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া ৪২০ হেক্টর জমির বোরো বীজতলা, ৪০০৭ হেক্টর জমির গম, ৯৮৬ হেক্টর জমির আলু, ৭৮৩৮ হেক্টর জমির সরিষা, ৮৩৪২ হেক্টর জমির ভুট্টা ক্ষেত, ৬৪৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, ১৭৮৫ হেক্টর জমির রসুন, ৬৭৫৫ হেক্টর জমির মসুর, ৪৫৫ হেক্টর জমির মরিচ ও ২৩৯২ হেক্টর জমির আমন ধান ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে ব্যাপক ভাবে ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ভুট্টার ক্ষেত ছাড়া বাকী ফসলগুলো বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই বলে কৃষিবিদরা মনে করেন। ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, প্রাথমিক ভাবে আমরা ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করে ঢাকায় পাঠিয়েছি।
ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা কৃষকদের নানা ভাবে সহায়তা করছি। যারা সরকারী ভাবে কৃষি উপকরণ পেয়েছিল, কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তাদেরও এই মুহুর্তে কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ভুট্টার ক্ষেতগুলো তেমন ক্ষতি হবে না। তা ছাড়া প্রায় সব ফসলের ক্ষেত কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬১২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল। ৯৮% জমির পাকা ধান কাটা শেষ হয়েছিল। কিন্তু যারা গরুর খাবার তৈরীর জন্য মাঠে ধান শুকাচ্ছিল, কেবল তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই ক্ষতির পরিমান ২৩৯২ হেক্টর বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।