সচরাচর ঘোড়ার গাড়ি আগের মতো তেমন একটা দেখা না গেলেও দিনাজপুরের হিলিতে বিলুপ্ত প্রায় ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন আব্দুল মতিন মিয়া।৩২ বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোর পাশপাশি এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারসহ তিন ছেলে-মেয়েকে লিখাপড়া শিখিয়েছেন তিনি। তারমতো আরো অনেকে এই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
হিলির হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল মতিন মিয়া। জীবিকার তাগিদে ঘোড়ার গাড়ি চালালেও সেই ঘোড়ার গাড়ির চাকাই বদলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা।সংসারের সকল চাহিদা পুরন করেও ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছে এই ঘোড়ায়ালা মতিন মিয়া। এছাড়াও ঐ এলাকায় আরও ১৮ থেকে ২০ মানুষ ঘোড়ার গাড়ির উপর নির্ভরশীল। তাদের সবার ঘোড়ার গাড়ি চালানো বাপ-দাদা আমলের পেশা।অনেকেই গাড়ি চালানোর পাশাপাশি ঘোড়া বেচাকেনার ব্যবসাও করেন থাকেন। ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি একটি প্রাচীনতম বাহন।
ঐসময় দ্রুত বাহন হিসেবে মানুষ ঘোড়াকেই ব্যবহার করে থাকতো। ঘোড়া ও গাড়িতে চড়ে রাজা-বাদশারা দেশ শাসন করতেন। এছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়া ব্যবহার হতো। ঘোড়ায় ছিলো মানুষের একমাত্র বাহক।হিলির হরিহরপুর গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন আজও প্রাচীনকালের সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে তার কর্মের সন্ধানে বেড় হয়ে যায়। পরে রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মালমাল বহন করেন এসব গাড়িতে।
হিলির হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল গাফফার বলেন, আমি প্রায় ২২ বছর যাবৎ এই ঘোড়ার গাড়ি চালায়। আমার নিজস্ব কিছু আবাদি জমি আছে, সেই জমি চাষাবাদের পাশাপাশি এই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালায়। চাল বাড়ির, শুধু তরিতরকারি বাজার থেকে কিনতে হয়। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে যা পাই তাই দিয়ে আমার সংসার বেশ ভালই চলে। কারো কাছে কোনপ্রকার হাত পাততে হয়না।
একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়ে যাওয়ায় মানুষজন আগামী বোরো ধানের জন্য জমি তৈরি করছেন চাষিরা। চাষিদের সেসব জমিতে গোবর সার ঢোলাইয়ের কাজ করছি আমরা এই এলাকার ঘোড়ার গাড়ি ওয়ালারা। সারাদিন ৮ থেকে ৯ গাড়ি করে গোবর সার মাঠে ফেলছি আমরা। ঢোলায় বাবদ গাড়ি প্রতি নিচ্ছি ৭০ টাকা করে, এতে করে প্রতিদিন আয় হয় ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিন ঘোড়া বাবদ খরচ হয় ১শ টাকা করে। বাকি টাকা দিয়ে সংসার খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটায়।প্রতিবছর বোরো ও আমন ধান কাটা-মাড়ায়ের সময় আমাদের আয় বেশি হয়।
হরিহরপুর গ্রামের আব্দুর মতিন মিয়া বলেন, ঘোড়ার গাড়ি আমার বাপ-দাদারা চালিয়ে আসছেন, সেই ধারাবাহিকতায় আমিও তার প্রতি নির্ভরশীল। আমার বয়স ৬৫ বছর হয়েছে গত ৩২ বছর যাবৎ আমি ঘোড়ার গাড়ি চালায়। আমি অন্য কোন কাজ কর্ম তেমন জানিনা। আমার আবাদি কোন জমিজমা নেই, ঘোড়ার গাড়িই আমার একমাত্র হালগরু।এটি চালিয়ে আমি সংসার চালানোসহ সবকিছু করি। আমার এই ঘোড়ার গাড়িই আমার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে আমার এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি, এক ছেলে অনার্স শেষ করেছে, আর এক মেয়েকে বিএ পাশ করে তার বিয়ে দিয়েছি। আজ আমার কোন সমস্যা নেয়, ছেলেরা চাকরি বাকরী পেলে আমার আর কোন চিন্তা থাকবে না।
হিলির আলিহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, ঘোড়ার গাড়ি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাহন সেই বাহন এখনো ধরে রেখেছেন আমার নির্বাচনী এলাকার হরিহরপুরের কিছু মানুষ। তারা এসব ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের যে কোন ধরনের প্রয়োজনে সবধরনের সহযোগীতা করা হবে বলেও জানান তিনি।