সারা বিশ্বের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছিলো ভারতের পর্যটন খাত, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে পর্যটক শুন্য দেশের সব পর্যটন এলাকায়। ভরা মৌসুমেও খালি পড়ে ছিলো বিভিন্ন রাজ্যের হোটেল মোটেল সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট পরিবহন ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠানসমূহ। লক্ষ লক্ষ টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়িদের। প্রায় সারা বছর বিদেশী পর্যটকে পূর্ন থাকা দেশ ভারতে এখন করোনা প্রভাব কাটাতে শুরু করেছে। প্রতিবেশী এই দেশের সিংহভাগ পর্যটক বাংলাদেশী । জনমানব শূন্য পর্যটন এলাকাগুলোতে পুরোনো চিত্র ফিরে পেতে ভারত সরকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে, লক্ষ একটাই পর্যটন খাতকে পুনরায় চাঙ্গা করা।
ভারতের বেশীরভাগ পর্যটক বাংলাদেশ থেকে যেত। করোনার কারনে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে পর্যটক না যাওয়ায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে ব্যাবসায়। স্বাভাবিক সময়ের চাইতে আয় অনেক কমে গেছে। মুখরোচক খাবার, যেকোন ধরনের কেনাকাটা, চিকিৎসা কিংবা বেড়ানোর জন্য বিখ্যাত কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়ও দীর্ঘদিন ধরে বইছে সুনসান নিরবতা। করোনায় স্থানীয়রা বাহিরে বের না হওয়ার কারনে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই অনেকের খাদ্যাভ্যাসে আসছে পরিবর্তন, ফলে হোটেল রেষ্টুরেন্ট সহ সড়কে যেসকল ব্যাবসায়িরা স্বাভাবিক সময়ে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছিলেন তাদের ব্যবসায়ও ধ্বস নেমেছে।
তবে আশার খবর হলো বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে পর্যটন নিয়ে ভাবতে শুরু করেনি সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত দেশের পর্যটন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পর্যটকদের ৫ লাখ টুরিষ্ট ভিসা ফ্রি দিবে বলে জানা গেছে। মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেড় বছর পর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভারত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পাওয়ায় শিগগিরই বিদেশিদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
ভারতের সরকারি সংবাদসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বলেছে, গত বছরের মার্চে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ পর্যটন, আতিথেয়তা এবং বিমান পরিবহন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে প্রথম পাঁচ লাখ বিদেশি পর্যটককে বিনামূল্যে ভিসা দেওয়া হবে।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলার প্রত্যাশিত সময় এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সব অংশীদারদের সাথে আলোচনা করছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশি পর্যটকদের ভারত ভ্রমণের অনুমতির ব্যাপারে চলতি মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তিনি বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসায় সীমান্ত খুলে দেওয়ার বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চলতি মাসের হিসেব অনুযায়ী ভারতে করোনাভাইরাসের টিকাদানের সংখ্যা ৮০ কোটি ছাড়িয়েছে।পর্যটকদের বিনামূল্যের ভিসার মেয়াদ ৬মাস পর্যন্ত করা হতে পারে। প্রথম দফায় প্রায় পাঁচ লাখ ভিসা ইস্যু করা হবে। এজন্য ভারতের সরকারের মোট ১০০ কোটি রুপি ব্যয় হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।জানা যায়, বিনামূল্যে ভিসা দেওয়ার এই পদক্ষেপ স্বল্পসময়ের জন্য ভারত সফরে আসা পর্যটকদের উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছরের মার্চ থেকে ই-ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত রেখেছে ভারত। তবে বিদেশি পর্যটকদের কিছু শর্তে ভারত ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে কিনা সেটি নিয়েও এখনও চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র টিকা নেওয়া পর্যটকদের অনুমতি এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে; এমন দেশের পর্যটকদের ভারত ভ্রমণের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিগত কয়েক বছরে মেডিকেল ট্যুরিজমের শীর্ষে ছিলো ভারত, করোনা মহামারিতে শর্তসাপেক্ষে মেডিকেল সহ কয়েকটি ক্যাটাগরির ভিসা চালু থাকলেও ট্যুরিষ্ট ভিসা ছিলো সম্পূর্ণ বন্ধ। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে সবার জন্য ট্যুরিষ্ট ভিসা চালু হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রি হর্ষবর্ধন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ২৪।।