সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারন যাত্রীরা।
শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টায় শহরের আশেকপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবাদ কর্মসূচীতে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘চাকরিতে কোটা, মানি না মানবো না’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়/স্বাধীনতার বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, ‘হাইকোর্টের রায়, মানি না মানবো না’, ‘কোটা পদ্ধতি, কোটা পদ্ধতি, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা কখনও সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে চাই না। আমরা পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই। কারণ যে পরিমাণ কোটা, তাতে দেশের মেধাবীরা চাকরি না পেয়ে দেশের বাইরে চলে যাবে। দেশে সরকারি চাকুরি করার আগ্রহও হারাবে। এ সময়, শিক্ষার্থীদের ঘোষিত চার দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (সুবিধা বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24