প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রেখে একটি আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নত জাতি গঠনে অবদান রাখতে হজযাত্রী এবং আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (হজযাত্রীদের) এবং আলেম-ওলামাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আমাদের শিশুরা এটি থেকে দূরে থাকতে পারে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত হতে পারে।’
রাজধানীর আশকোনা এলাকায় আজ হজ অফিসে হজ কর্মসূচি-২০২৩ (১৪৪৪ হিজরি) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এটি সর্বদা মানুষের কল্যাণের ধর্ম যা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস করে এমন কিছু লোকের কারণে ইসলামকে নিন্দিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাদের কোন ধর্ম নেই।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করছে তারা সব ধর্মেই আছে। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করে যে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবে, তা কখনই হবে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা বলেননি এবং আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তা বলেননি।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং এই অল্প কিছু মানুষই ইসলামের নিন্দার কারণ হয়ে উঠছে।’ তিনি বলেন, এই জঘন্য কাজটি থেকে এই লোকদের থামাতে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন,‘আমাদের সবাইকে আমাদের শিশুদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের (হজযাত্রীদের) কাছে আমার সবচেয়ে বড় দাবি হল, আপনারা আমার বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন, যাতে তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’ তিনি হজযাত্রীদের বাংলাদেশ ও এর জনগণকে মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে কোনো দুর্যোগ বা সংকট -তা মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটে কারণ এখানে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং পরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। তিনি হজযাত্রীদের দোয়া করতে বলেন যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বর্তমান অগ্রগতি অব্যাহত থাকে।
প্রথম হজ ফ্লাইটটি শনিবার বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন। কভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭,৫৮৫। কভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ১২৭,১৯৮ জন হজ পালন করেছিলেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো.ফরিদুল হক খান এমপি’র সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, হাবিব হাসান এমপি, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুলাইহান এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম। অনুষ্ঠানের শুরুতে হজ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ বাংলাদেশকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে যেখানে দেশের মানুষ অন্তত খাবার খেতে পারছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি।’
হজের সময় হাজীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আল্লাহর মেহমান হিসেবে আল্লাহর ঘরের পাশাপাশি মক্কা-মদিনা শরীফে যাচ্ছেন। ‘আমরা প্রার্থনা করি যেন আপনারা নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারেন এবং সেই সাথে আপনারা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন।’ তিনি বলেন, হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে তারা ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন হজের যাবতীয় কার্যক্রম যেমন প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ফেরত, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্প ডেস্ক, কল সেন্টার, এজেন্সি প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট এসব ই-হজ ব্যবস্থাপনার অধীনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএমএসের মাধ্যমে এবং কল সেন্টার থেকে প্রতিটি হজযাত্রীকে হজ সংক্রান্ত সকল তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং হজযাত্রীরা ১৬১৩৬ নম্বরে ডায়াল করে সবকিছু জানতে পারবেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছেন, যা হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করেছে।
ফরহাদ/অননিউজ